সমাস কাকে বলে? সমাস কত প্রকার? সমাসের বিস্তারিত আলোচনা।

সমাস কাকে বলে?

সমাস কাকে বলে?

বাংলা ব্যাকরণে সমাস অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়। একাডেমিক পড়াশুনা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কিংবা চাকরি প্রস্তুতি সহ সকল প্রতিযোগীতা মূলক পরিক্ষা গুলোতে সমাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা এই পোস্টে সমাস কাকে বলে? সমাস কত প্রকার? ইত্যাদি সহ সমাস নিয়ে বিস্তর আলোচনা করব।

সমাস কাকে বলে?
সমাস কাকে বলে?

সংজ্ঞার দিক থেকে সমাস কাকে বলে?

সমাস অর্থ- মিলন, সংক্ষেপ, বা একাধিক পদের একপদী করণ। অর্থাৎ, পরস্পর অর্থসঙ্গতি এবং সম্বন্ধ বিশিষ্ট দুই কিংবা ততোধিক পদ এক পদে পরিণত হওয়াকে সমাস বলে।

যেমনঃ সিংহ চিহ্নত আসন= সিংহাসন

সমাস কি বা সমাস কাকে বলে তা আলোচনা শুরুর পূর্বে আমাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জেনে নিতে হবে। চলুন দেখি কি সেগুলো।

সমস্তপদ কাকে বলে?

সমাসবদ্ধ বা সমাস নিস্পন্ন পদটির নামই সমস্ত পদ।

যেমনঃ সিংহাসন।

সমস্যমান পদ কাকে বলে?

যে সকল পদ দিয়ে সমাস হয় তাদের প্রতিটি পদই সমস্যামান পদ বলে।

যেমনঃ সিংহ, আসন।

পূর্বপদ কাকে বলে?

সমাসযুক্ত পদের পরবর্তী অংশটিকে বলা হয় পরপদ।

যেমনঃ সিংহ হচ্ছে পূর্বপদ।

উত্তরপদ বা পরপদ কাকে বলে?

সমাসযুক্ত পদের প্রথম অংশটিকে বলা হয় পরপদ।

যেমনঃ ‘আসন’ হচ্ছে পরপদ।

বাসবাক্য, বিগ্রহবাক্য বা সমাস বাক্য কাকে বলে?

সমস্তপদ বা সমাসবদ্ধ পদকে ভেঙে যে বাক্যাংশ গুলো তৈরি হয়, তাকে বাসবাক্য, বিগ্রহবাক্য বা সমাসবাক্য বলে।

যেমনঃ ‘সিংহ চিহ্নত আসন’।

সমাস কত প্রকার? সমাসের প্রকারভেদ গুলো কি কি?

বাংলা ব্যকরণে সমাস প্রধানত ৬ প্রকার । যথাঃ-

১। দ্বন্ধ সমাস

২। কর্মধারয় সমাস

৩। তৎপুরুষ সমাস

৪। বহুব্রীহি সমাস

৫। অব্যয়ীভাব সমাস

৬। দ্বিগু সমাস

ব্যাসবাক্য মনে রাখার কৌশল

দ্বন্ধ সমাস ও, এবং, আর থাকলে
কর্মধারয় সমাস যেই-সেই, যা-এ, যিনি-তিনি, যে-সে থাকলে।
তৎপুরুষ সমাস বিভক্তি লোপ পেলে
 বহুব্রীহি যার, যাতে থাকলে
দ্বিগু সমাস সমাহার থাকলে
অব্যয়ীভাব সমাস নৈকট্য/সমীপে, কিংবা, অভাব, পর্যন্ত, সাদৃশ্য, ক্ষুদ্রতা, যোগ্যতা, অতিক্রম, পশ্চাৎ, অতিক্রান্ত থাকলে

দ্বন্দ্ব সমাস কি? বা দ্বন্দ্ব সমাস কাকে বলে?

দ্বন্দ্ব সমাস কাকে বলে
দ্বন্দ্ব সমাস কাকে বলে?

যে সকল সমাসে প্রতিটি সমস্যমান পদের অর্থের প্রাধান্য থাকে সেগুলোকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে। দ্বন্দ্ব সমাসে পর্বপদ এবং পরপদের সম্বন্ধ বুঝাতে ব্যাসবাক্যে “ও , এবং,  আর” এই তিনটি অব্যয় পদ ব্যবহৃত হয়।

যেমন – ভাই ও বোন = ভাইবোন,

মাতা ও পিতা = মাতাপিতা।

দ্বন্দ্ব সমাসের প্রকারভেদ বা দ্বন্দ্ব সমাসের শ্রেণীবিভাগ

বাংলা ব্যাকরণে দ্বন্দ্ব সমাস নানা প্রকার হতে থাকে। প্রধান প্রধান দ্বন্দ্ব সমাস গুলো হলো –

  1. মিলনার্থক দ্বন্দ্ব (মাসি ও পিসি = মাসি-পিসি)
  2. সমার্থক দ্বন্দ্ব (হাট ও বাজার = হাট- বাজার)
  3. বিরোধার্থক দ্বন্দ্ব ( দা ও কুমড়া = দা -কুমড়া)
  4. অলুক দ্বন্দ্ব ( দেশে ও বিদেশে = দেশে-বিদেশে)
  5. ইত্যাদি অর্থে দ্বন্দ্ব (কাপড় ও চোপড় = কাপড়-চোপড়)
  6. বহুপদী দ্বন্দ্ব (বই, খাতা ও কলম = বই- খাতা- কলম)

সমস্তপদ

বাসবাক্য

সমাসের নাম

দম্পত্তি জায়া ও পতি  

 

 

দ্বন্ধ

ভাইবোন ভাই ও বোন
মা-বাবা মা ও বাবা
দা-কুমড়া দা ও কুমড়া
অহিনকুল অহি ও নকুল
জমা-খরচ জমা ও খরচ
হাট-বাজার হাট ও বাজার
দুধে-ভাতে দুধে ও ভাতে

অলুক দ্বন্ধ

ঘরে বাইরে ঘরে ও বাহিরে
আমরা আমি, তুমি ও সে

কর্মধারয় সমাস কি? কর্মধারয় সমাস কাকে বলে?

কর্মধারয় সমাস কাকে বলে?
কর্মধারয় সমাস কাকে বলে?

বিশেষণ বা বিশেষণ ভাবাপন্ন পদের সঙ্গে বিশেষ্য বা বিশেষ্য ভাবাপন্ন পদ গুলোর সমাস হয় এবং পরপদের অর্থই প্রধান হয়, তাকে কর্মধারয় সমাস বলে।

যেমন – যে চালাক সেই চতুর = চালাক-চতুর

কর্মধারয় সমাস কত প্রকার?

কর্মধারয় সমাস ৪ প্রকার।

  1. মধ্যপদলোপী সমাস
  2. উপমান কর্মধারয়
  3. উপমিত কর্মধারয়
  4. রূপক কর্মধারয়

 

১. মধ্যপদলোপী সমাসঃ যে সমাসে ব্যাসবাক্যেতে মধ্যপদের লোপ হয়, তাকেই মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলে।

উদাহরণ :

পল (মাংস) মিশ্রিত অন্ন = পলান্ন

সিংহ চিহ্নিত আসন = সিংহাসন।

সমস্তপদ বাসবাক্য

সমাসের নাম

সিংহাসন সিংহ চিহ্নিত আসন  

 

মধ্যপদলোপী সমাস

জোৎস্নারাত জোৎস্না সুভিত রাত
মৌমাছি মৌ-সঞ্চয়কারী মাছি
ভিক্ষান্ন ভিক্ষা লব্ধ অন্ন
পলান্ন পল মিশ্রিত অন্ন
হাসিমুখ হাসি মাখা মুখ

 

. উপমান কর্মধারয় : উপমান অর্থ তুলনীয় বস্তু। যার সাথে ব্যক্তি বা বস্তুর তুলনা

করা হয় তাকে বলা হয় উপমান।

সাধারণ ধর্মবাচক পদের সাথে উপমান পদের যে সমাস হয় তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে।

উদাহরণ : মিশির ন্যায় কালো = মিশকালো

শশকের ন্যায় ব্যস্ত = শশব্যস্ত

 

সমস্তপদ বাসবাক্য সমাসের নাম
ভ্রমর ‍কৃষ্ণ কেশ ভ্রমরের ন্যায় কৃষ্ণ কেশ (উপমান) (সাধারণ ধর্ম) (উপমেয়)  

উপমান কর্মধারয়

তুষারশুভ্র তুষারের ন্যায় শুভ্র
কাজল কালো কাজলের ন্যায় কালো

. উপমিত কর্মধারয় : প্রত্যক্ষ বস্তুর সাথে পরোক্ষ বস্তুর তুলনা করলে প্রত্যক্ষ

বস্তুটিকে বলা হয় উপমেয় বা উপমিত। সাধারণ গুণের কথা উল্লেখ না করে উপমেয় পদের সাথে উপমান পদের যে সমাস হয়, তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে।

উদারহণ : কর কমল সদৃশ = করকমল

পুরুষ সিংহের ন্যায় = পুরুষসিংহ।

সমস্তপদ

বাসবাক্য

সমাসের নাম

মুখচন্দ্র মুখ (উপমেয়) চন্দ্রের (উপমান) ন্যায়  

উপমিত কর্মধারয়

পুরুষ ‍সিংহ পুরুষ সিংহের ন্যায়

 

. রূপক কর্মধারয় : উপমান ও উপমেয়ের মধ্যে অভিন্নতা কল্পনা করা হলে অর্থাৎ

অভেদারােপ করা হলে তাকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলা হয়। উদাহরণ : মন রূপ মাঝি = মনমাঝি বিষাদ রূপ সিন্ধু = বিষাদসিন্ধু

সমস্তপদ বাসবাক্য সমাসের নাম
মনমাঝি মন রূপ মাঝি  

রুপক কর্মধারয় সমাস

বিষাদসিন্ধু বিষাদ রূপ সিন্ধু
ক্রোধানল ক্রোধ রূপ অনল
ভবনদী ভব রূপ নদী

তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে? তৎপুরুষ সমাস কি?

তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে?
তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে?

পূর্বপদের বিভক্তি লোপ পেয়ে এবং পরপদের অর্থ প্রাধান্যরূপে যে সমাস গঠিত হয়, তাই তৎপুরুষ সমাস।

তৎপুরুষ সমাস কত প্রকার?

প্রকারভেদ : তৎপুরুষ সমাস নয় প্রকার।

  1. দ্বিতীয়া তৎপুরুষ
  2. তৃতীয়া তৎপুরুষ
  3. চতুর্থী তৎপুরুষ
  4. পঞ্চমী তৎপুরুষ
  5. ষষ্ঠী তৎপুরুষ
  6. সপ্তমী তৎপুরুষ
  7. নঞ তৎপুরুষ
  8. উপপদ তৎপুরুষ
  9. অলুক তৎপুরুষ সমাস

আরো রয়েছে

  1. সুপসুপা সমাস
  2. নিত্য সমাস
  3. প্রাদি সমাস

 

১. দ্বিতীয়া তৎপুরুষ : পূর্বপদে দ্বিতীয়া বিভক্তি লোপ পায়। উদাহরণ : পদকে আশ্রিত = পদাশ্রিত চরণকে আশ্রিত = চরণাশ্রিত

বিপদকে আপন্ন = বিপদাপন্ন। ধর্মকে সংক্রান্ত = ধর্মসংক্রান্ত

. তৃতীয়া তৎপুরুষঃ পূর্বপদে তৃতীয়া বিভক্তি লোপ পায়।

উদাহরণ : উেঁকি দ্বারা ছাঁটা = চেঁকিছাঁটা

ঘি দিয়ে ভাজা = ঘিয়েভাজা

 

৩. চতুর্থী তৎপুরুষঃ পূর্বপদে চতুর্থী বিভক্তি লোপ পায়। সাধারণত তরে, জন্য, নিমিত্ত বিভক্তিগুলো লোপ পায়।

উদাহরণ : বিয়ের জন্য পাগলা = বিয়েপাগলা

শয়নের নিমিত্তে কক্ষ = শয়নকক্ষ

 

৪. পঞ্চমী তৎপুরুষঃ পূর্বপদে পঞ্চমী বিভক্তি লোপ পায়। সাধারণত পুত, জাত, আগত, ভীত, গৃহীত, নিয়ত, মুক্ত, উত্তীর্ণ, চালানো, ভ্রষ্ট ইত্যাদি পরস্পরের ফলে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস হয়।

উদাহরণ : আগা থেকে গোড়া = আগাগোড়া

জেল থেকে খালাস = জেলখালাস

বিলাত হতে ফেরত = বিলাতফেরত

প্রাণের চেয়ে প্রিয় = প্রাণপ্রিয়।

 

৫. ষষ্ঠী তৎপুরুষ : পূর্বপদে ষষ্ঠী বিভক্তি লোপ পায়।

উদাহরণ : কবিদের গুরু = কবিগুরু

মনের রথ = মনোরথ

খেয়ার ঘাট = খেয়াঘাট

নাটকের অভিনয় = নাট্যাভিনয়

 

৬. সপ্তমী তৎপুরুষঃ পূর্বপদে সপ্তমী বিভক্তি লোপ পায়।

উদাহরণ : গোলায় ভরা = গোলাভরা

গাছে পাকা = গাছপাকা

অকালে পক্ক = অকালপক্ক

বিশ্বের বিখ্যাত = বিশ্ববিখ্যাত।

 

৭. নঞ তৎপুরুষ নঞ অব্যয়ঃ (না, নেই, নাই, নয়) পূর্বে বসে।

উদাহরণ : নয় সুখ = অসুখ

ন আচার = অনাচার

নয় অতি দীর্ঘ = নাতিদীর্ঘ

নাই বৃষ্টি = অনাবৃষ্টি

. উপপদ তৎপুরুষ : কৃৎপ্রত্যয় সাধিত পদ হল কৃদন্তপদ। কৃদন্তপদ-পূর্ব

বিশেষ্যকে বলে উপপদ। উপপদের সাথে কৃদন্ত পদের যে সমাস হয় তাকে উপপদ তৎপুরুষ সমাস বলে।

উদাহরণ : জলে চরে যে = জলচর

স্থলে চলে যে = স্থলচর

মধু পান করে যে = মধুপ

যাদু করে যে = যাদুকর

 

৯. অলুক তৎপুরুষ সমাস : যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদে বিভক্তি লোপ পায়, তাকে অলুক তৎপুরুষ সমাস বলে।

উদাহরণ : হাতে কাটা = হাতকাটা

তেলে ভাজা = তেলেভাজা

পড়ার জন্য ঘর = পড়ারঘর

ঘানির তেল = ঘানিরতেল

 

এছাড়াও রয়েছে –

. সুপসুপা সমাস: ‘সুপ’ অর্থ বিভক্তিযুক্ত নামপদ। কোন বিভক্তিযুক্ত নামপদের

সাথে অপর কোন বিভক্তিযুক্ত নামপদের সমাস হলে, তাকে সুপসুপা তৎপুরুষ সমাস বলে।

যেমন : পূর্বে ভূত = ভূতপূর্ব

. নিত্য সমাস : যে সমাসে সমস্যমান পদগুলো নিত্য সমাসবদ্ধ থাকে, ব্যসবাক্যের দরকার হয় না, তাকে নিত্য সমাস বলে।

উদাহরণ : কেবল দর্শন = দর্শনমাত্র

সমস্ত গ্রাম = গ্রামসুদ্ধ

অন্য গ্রাম = গ্রামান্তর

অন্য বিষয় = বিষয়ান্তর।

 

৩. প্রাদি সমাস : যে সমাসের পূর্বে উপসর্গ (প্র, প্রতি, উৎ) ও উত্তরে কৃদন্ত পদ যুক্ত হয় এবং অব্যয়ের সাথে যুক্ত হয়, তাকে প্রাদি সমাস বলে।

উদাহরণ : অনুতে (পশ্চাতে) যে তাপ = অনুতাপ

প্রকৃষ্ট ভাব = প্রভাব

বাস্তু থেকে উৎখাত = উদ্বাস্তু ।

 

সমস্তপদ বাসবাক্য

সমাসের নাম

বিপদাপন্ন বিপদকে আপন্ন দ্বিতীয়া তৎপুরুষ
চিরসুখী( ব্যাপ্তি অর্থে) চিরকাল ব্যাপিয়া সুখী
মনগড়া মন দিয়ে গড়া তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস

 

 তেলেভাজা তেল দিয়ে ভাজা
বিয়ে পাগলা বিয়ের জন্য পাগলা চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস

 

হাজ্জ্বযাত্রা হজ্জ্বের জন্য যাত্রা
বিলাতফেরত বিলাত থেকে ফেরত পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস
রাজপুত্র রাজার পুত্র ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
গাছপাকা গাছে পাকা সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস
অনাদর ন আদর নঞ তৎপুরুষ সমাস
পকেটমার পকেট মারে যে উপপদ তৎপুরুষ সমাস
ঘিয়ে ভাজা ঘিয়ে ভাজা অলুক তৎপুরুষ সমাস
মুখে ভাত মুখে ভাত

বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে?

বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে?
বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে?

যে সমাসে সমস্যমান পদগুলোর কোনটির অর্থ না বুঝিয়ে অন্য কোন অর্থ প্রকাশ করে, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে।

যেমন :বহুব্রীহি (ধান) আছে যার = বহুব্রীহি।

এখানে বহু’ কিংবা ব্রীহি’ কোনটির অর্থেরই প্রাধান্য নেই, যার বহু ধান আছে এমন লোককে বোঝাচ্ছে।

বহুব্রীহি সমাস কত প্রকার? বহুব্রীহি সমাসের প্রকারভেদ :

  1. বহুব্রীহি সমাস আট প্রকার।
  2. সমানাধিকরণ বহুব্রীহি
  3. ব্যধিকরণ বহুব্রীহি
  4. ব্যতিহার বহুব্রীহি
  5. মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি
  6. অলুক বহুব্রীহি
  7. নঞ বহুব্রীহি
  8. প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি

 

১. সমানাধিকরণ বহুব্রীহি : পূর্বপদ বিশেষণ ও পরপদ বিশেষ্য হয়।

উদাহরণ : পোড়া কপাল যার = পোড়া কপাল

পুণ্য আত্মা যাহার = পুণ্যাত্মা

 

২. ব্যধিকরণ বহুব্রীহি : পূর্বপদ ও পরপদ উভয়ই বিশেষ্য হয়।

উদাহরণ : নদী মাতা যার = নদীমাতৃক

পদ্ম নাভিতে যার = পদ্মনাভ

ঊর্ণ নাভিতে যার = ঊর্ণনাভ

 

৩. ব্যতিহার বহুব্রীহি : একই কার্য বোঝাতে একই পদের দ্বিত্ব হয়। অন্যভাবে, যে বহুব্রীহি সমাসে দুটি সমরূপ বিশেষ্য দিয়ে এক জাতীয় কাজ বোঝায়, তাকে ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস বলে।

উদাহরণ : লাঠিতে লাঠিতে যে যুদ্ধ = লাঠালাঠি

কানে কানে যে কথা = কানাকানি

 

৪. মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি : ব্যাসবাক্যের ব্যাখ্যামূলক যে-কোন পদের লোপ পায়।

উদাহরণ : চন্দ্রের ন্যায় বদন যার = চন্দ্রবদন।

মৃগের নয়নের ন্যায় নয়ন যার = মৃগনয়না

 

৫. অলুক বহুব্রীহি : বিভক্তির ললাপ হয় না।

উদাহরণ : মাথায় পাগড়ি যার = মাথায়-পাগড়ি

হাতে বেড়ি যার = হাতে-বেড়ি

 

৬. নঞ বহুব্রীহি : যে বহুব্রীহি সমাসের পূর্বে নঞ পদ থাকে অর্থাৎ নঞর্থক অব্যয় পদের সাথে বিশেষ্য পদের যে বহুব্রীহি সমাস হয়, তাকে নঞ বহুব্রীহি সমাস বলে।

নঞ বহুব্রীহি সমাসে সাধিত পদ বিশেষণ হয়।

উদাহরণ :

নাই ভয় যার = নির্ভয়

নাই বোধ যার = নির্বোধ

 

৭. প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি : সমস্ত পদে আ, এ, ও ইত্যাদি প্রত্যয় যুক্ত হয়।

উদাহরণ : ঘরের দিকে মুখ যার = ঘরমুখো

দুই দিকে টান যার = দোটানা

দুই তলা যার = দোতলা

এক দিকে চোখ যার = একচোখা

 

৮. সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি : পূর্বপদে সংখ্যাবাচক এবং পরপদ বিশেষ্য হয়।

সমস্ত পদটি বিশেষণ বোঝায় এবং এতে আ, ই, বা ঈ যুক্ত হয়।

উদাহরণ : চৌ (চার) কাঠ যার = চৌকাঠ

চৌ (চার) রাস্তা যার = চৌরাস্তা

দশ আনন যার = দশানন

পঞ্চ আনন যার = পঞ্চানন

এছাড়াও আরো কয়েক প্রকার বহুব্রীহি সমাস আছে।

যেমন :

  1. অন্ত্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাস
  2. সহাৰ্থক বহুব্রীহি
  3. নিপাতনে সিদ্ধ সমাস

 

. অন্ত্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাস : ব্যাসবাক্যের শেষপদ লোপ পেয়ে যে বহুব্রীহি সমাস হয়, তাকে অন্ত্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাস বলে।

যেমন : গায়ে হলুদ দেয়া হয় যে অনুষ্ঠানে = গায়ে-হলুদ।

 

. সহাৰ্থক বহুব্রীহি : সহ অর্থক বা সহাৰ্থক তুল্য পদের সাথে বিশেষ্য পদের

যে বহুব্রীহি সমাস হয়, তাকে সহাৰ্থক বহুব্রীহি সমাস বলে।

যেমন : পরিবারের সাথে = সপরিবার

সম্মানের সাথে = সসম্মান

পুত্রের সহিত বর্তমান = সপুত্ৰক

স্ত্রীর সহিত বর্তমান = সস্ত্রীক

 

নিপাতনে সিদ্ধ সমাস : যে বহুব্রীহি সমাস কোন নিয়মের অধীন নয়, তাকে নিপাতনে সিদ্ধ সমাস বলে।

যেমন : দুদিকে অপ যার = দ্বীপ

জীবিত থেকেও মৃত = জীবন্ত

সমস্তপদ বাসবাক্য

সমাসের নাম

খোশমেজাজ খোশ মেজাজ যার সমানাধিকরণ বহুব্রীহি
নীরকন্ঠ নীল কন্ঠ যার
আশীবিষ আশীতে বিষ যার ব্যধিকরণ
কানাকানি কানে কানে যে কথা ব্যতিহার বহুব্রীহি
হাতাহাতি হাতে হাতে যে যুদ্ধ
লাঠালাঠি লাঠিতে লাঠিতে যে যুদ্ধ
অসুখ নাই সুখ যার নঞ বহুব্রীহি
অজ্ঞান নাই জ্ঞান যার
বেতার নাই তার যার
হাতে খড়ি হাতে খড়ি দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি
গায়ে হলুদ গায়ে হলুদ দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে
একচোখা একদিকে চোখ যার প্রদ্যয়ান্ত বহুব্রীহি
মাথায় পাগড়ি মাথায় পাগড়ি যার অলুক বহুব্রীহি
দশগজি দশ গজ পরিমাণ যার সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি
জীনন্মৃত জীবিত থেকেও যে মৃত নিপাতনে সিদ্ধ বহুব্রীহি

অব্যয়ীভাব সমাস কাকে বলে?

অব্যয়ীভাব সমাস কাকে বলে?
অব্যয়ীভাব সমাস কাকে বলে?

যে সমাসের পূর্বপদে অব্যয় থাকে এবং অব্যয়ের অর্থ প্রধানরূপে প্রতীয়মান হয় তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে।

বিভিন্ন অর্থে অব্যয়ীভাব সমাস।

. যোগ্যতা অর্থে : গুণের যোগ্য = অনুগুণ ।

রূপের যোগ্য = অনুরূপ

প্রেরণার যোগ্য = অনুপ্রেরণা

ভাবের যোগ্য = অনুভব

 

২. বীপ্সা (অনু, প্রতি) : রোজ রোজ = হররোজ

দিন দিন = প্রতিদিন

ক্ষণ ক্ষণ = অনুক্ষণ

ক্ষণ ক্ষণ = প্রতিক্ষণ

 

. অভাব (নিঃ নির) : ভিক্ষার অভাব = দুর্ভিক্ষ

জলের অভাব = নির্জল

 

. পর্যন্ত () : পা থেকে মাথা পর্যন্ত = আপাদমস্তক।

সমুদ্র থেকে হিমাচল পর্যন্ত = আসমুদ্রহিমাচল

কণ্ঠ পর্যন্ত = আকণ্ঠ জীবন পর্যন্ত = আজীবন

 

. সাদৃশ্য (উপ) : বনের সদৃশ = উপবন

দ্বীপের সদৃশ = উপদ্বীপ

 

. অনতিক্রম্যতা (যথা) :

সাধ্যকে অতিক্রম না করে = যথাসাধ্য

রীতিকে অতিক্রম না করে = যথারীতি

 

. অতিক্রান্ত (উৎ) :

বেলাকে অতিক্রান্ত = উদ্বেল

শৃখলাকে অতিক্রান্ত = উচ্ছল

 

. বিরোধ (প্রতি): বিরুদ্ধ কূল = প্রতিকূল

বিরুদ্ধ বাদ = প্রতিবাদ

 

. পশ্চাৎ (অনু) : গমনের পশ্চাৎ = অনুগমন

তাপের পশ্চাৎ = অনুতাপ

ক্রমের পশ্চাৎ = অনুক্রম

ধাবনের পশ্চাৎ = অনুধাবন

 

১০. ঈষৎ () : ঈষৎ নত = আনত

ঈষৎ রক্তিম = আরক্তিম

ঈষৎ লাল = ফিকা লাল

 

১১. ক্ষুদ্র অর্থে : ক্ষুদ্র শাখা = প্রশাখা।

ক্ষুদ্র অঙ্গ = প্রত্যঙ্গ

ক্ষুদ্র বিভাগ = উপবিভাগ

ক্ষুদ্র নদী = শাখানদী

 

সমস্তপদ বাসবাক্য

সমাসের নাম

উপসাগর সাগরের সদৃশ  

অব্যয়ীভাব সমাস

হাভাতে ভাতের অভাব
উপকন্ঠ কন্ঠের সমীপে
প্রতিদিন দিন দিন
আপাদমস্তক পা হতে মাথ পর্যন্ত
আমরণ মরণ পর্যন্ত
উপকূল কূলের সমীপে
যথারীতি রীতিকে অতিক্রম না করে
বেহায়া হায়ার অভাব

দ্বিগু সমাস কাকে বলে?

দ্বিগু সমাস কাকে বলে?
দ্বিগু সমাস কাকে বলে?

সমাহার অর্থে সংখ্যাবাচক শব্দ পূর্বে বসে বিশেষ্য পদের যে সমাস হয় তাকে দ্বিগু সমাস বলে। এতে পরপদের অর্থই প্রধান থাকে।

উদাহরণ : চৌদ্দ পুরুষের সমাহার = চৌদ্দপুরুষ

তিন ভুবনের সমাহার = ত্রিভুবন

পঞ্চ নদের সমাহার = পঞ্চনদ

সাত সমুদ্রের সমাহার = সাতসমুদ্র

 

সমস্তপদ বাসবাক্য সমাসের নাম
শতাব্দী শত অব্দের সমাহার  

দ্বিগু সমাস

তেমাথা তিন মাথার সমাহার
সেতার তিন তারের সমাহার
চোরাস্তা চার রাস্তার সমাহার

 

আরো পড়ুন

ধ্বনি কাকে বলে? ধ্বনি কত প্রকার? 

পদ কাকে বলে? পদ কত প্রকার? এবং পদের প্রকারভেদ

বাংলা ২য় পত্র

আমাদের পিডিএফ বই কালেকশান গুলো পেতে 

আমরা সাধারনত শিক্ষামূলক বিভিন্ন কন্টেন্ট শেয়ার করে থাকি। পড়াশুনা কে আরো সহজীকরন আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আমরা শিক্ষা সংক্রান্ত নিউজ গুলো সবার আগে সঠিকভাবে উপস্থাপন করে থাকি। তাই আপনি চাইলে নিয়মিত আমাদের শিক্ষা নিউজ ক্যাটাগরি টি ভিজিট করতে পারেন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button