চেহারা সুন্দর ও ফর্সা করার উপায় | যা করা উচিত এবং উচিত নয়

চেহারা সুন্দর ও ফর্সা করার টিপস

চেহারা ফরসা করার কার্যকরী উপায়

চেহেরা মহান আল্লাহর অনেক বড় নিয়ামত। পৃথিবীর সকল মানুষ নিজের চেহেরাকে সুন্দর দেখতে চায়। সুন্দর ও ফর্সা করতে চায়।নিজের চেহেরাকে সুন্দর ও ফর্সা রাখতে মানুষের আগ্রাহ কখনোই কমেনি। প্রত্যেকটি মানুষের জন্মলগ্ন থেকেই গায়ের রং ভিন্ন হয়। যেমন- কেউ ফর্সা, কেউ বা শ্যাম বর্ণ আবার কেউ হয়তো কালো বর্ণের। সাধারণত দেখা যায়, কালো ত্বকের মানুষরা তাদের ত্বক নিয়ে খুব মন খারাপ করেন। আবার যারা একটু ফর্সা, তারা চায় আরো একটু উজ্জ্বল হতে। অর্থাৎ ফর্সা থেকে কালো সবার মঝেই নিজের সৌন্দর্য বৃদ্ধির প্রবণতা লক্ষ করা যায়।

আমাদের মাঝে অনেকেই নিজের চেহেরাকে সুন্দর ও স্মার্ট রাখতে বিভিন্ন বই, ম্যাগাজিন, ডাক্তার ও অলাইনের দারস্থ হচ্ছেন। আজকের পোস্টটি মূলত তাদের নিয়েই। আজকের এ পোস্টে আমরা আপনাদের জানাবো- কিভাবে চেহার সুন্দর ও ফর্সা করা যায়। এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ দেশীয় সমাধান নিয়ে এসেছি। তাহলে চলুন শুরু করা যাক…

চেহারা সুন্দর করে তুলার উপায়

আপনি জন্মগতভাবে ফর্সা ত্বকের অধিকারী হলেও পরবর্তিতে ধুলা বালির উপদ্রবে বা রোদে পুড়ে সেই উজ্জল রং আর থাকে না। এই ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখার জন্য অনেকেই অনেক রকমের ক্রিম ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু এসব কেমিক্যাল যুক্ত ক্রিম ত্বকের জন্য খুব বেশি একটা উপকারী নাও হতে পারে। এই আর্টিকেলের মধ্যমে আমরা আপনার চেহারার হারানো জেল্লা ফিরিয়ে আনার কিছু প্রাকৃতিক উপায় বিশ্লেষন করব, যা অনুসরণের মাধ্যমে আপনার ত্বকের হারানো জেল্লা ফিরে আসবে।এই কৌশলগুলো খুবই সহজ।আর এই প্রাকৃতিক উপকরণ গুলো আপনি হাতের কাছেই পেয়ে যাবেন।

 

বেসন ও লেবুর রসের প্যাক

রূপচর্চার জন্য সারাবিশ্বে বেসনের তৈরি বিভিন্ন মাস্কের প্রচলন রয়েছে। বেসন খুব সহজলভ্য ও ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। বেসনের পাশাপাশি লেবুও ব্যবহার করা যায়। এটি ত্বককে পরিষ্কার ও দাগমুক্ত রাখতে সাহায্য করে। এই প্যাকটি করার চমৎকার উপায় হলো-

একটি পাত্র নিতে হবে, এতে
৩ চামচ বেসন,
২ চামচ লেবুর রস,
১ চামচ হলুদ গুড়া এবং
সামান্য পরিমাণে গোলাপজল নিয়ে সবগুলো উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।

ব্যাস…বেসন ও লেবুর রসের প্যাক তৈরি হয়ে গেলো। এবার এটিকে মুখে মাখুন এবং মিশ্রণটি শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর হালকা গরম পানিতে মুখ ধুয়ে নিন। হলুদ আপনাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং প্যাকে ব্যবহৃত লেবু অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা ত্বককে দাগের হাত থেকে রক্ষা করে।

 

 

গুঁড়া দুধ ও লেবুর রসের প্যাক

গুঁড়া দুধ ও লেবুর রসের প্যাকটি তৈরি করতে যা যা উপকরণ লাগবে-

১ চা চামচ গুঁড়া দুধ
২ চা চামচ লেবুর রস এবং
১/২ চা চামচ মধু

উল্লেখিত উপকরণ গুলো দিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুণ।

মিশ্রণটি প্রায় ১০ মিনিট মুখে রেখে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বককে পরিষ্কার ও উজ্জ্বল করে। সাধারনত সব ধরনের ত্বকেই এই প্যাকটি ব্যবহার করা যাবে। লেবুতে প্রাকৃতিক ব্লিচিং এর উপাদান থাকে এটি মধু আর দুধের সাথে মিশে ত্বক ফর্সা করে তুলে। প্যাকটি তৈরির সকল উপকরন হাতের নাগালেই পাওয়া যায়। এই প্যাকটি নিয়মিত লাগালে ত্বকে ব্রনের সমস্যাও দূর হবে।

 

 

মধু ও লেবুর রসের প্যাক

ত্বকের ময়েশ্চার ধরে রাখতে সাহায্য করে লেবুর রস। লেবুর রস আমাদের মুখ পরিস্কার রাখে। তবে লেবুর রস শুধু মুখে লাগিয়ে রাখলেই হবে না এর সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে জানতে হবে। আপনিও পারেন মধু ও লেবুর রসের সংমিশ্রণে প্যাকটি তৈরি করতে। বর্তমান বিশ্বে নারীদের ত্বকের যত্নে মধু ও লেবুর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই প্যাকটি তৈরি করতে প্রয়োজন পরে-
২ চামচ লেবুর রস এবং
২ চামচ মধু
উপরোক্ত দুটি উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে মুখে মাখুন।

এরপর ২০ মিনিট অপেক্ষা করে হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। এ মিশ্রণে মধু ত্বকের উজ্জলতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং লেবুর রস ত্বককে আরও ফর্সা করে তুলে।

 

এছাড়াও ত্বকের পরিচর্যায় লেবুর আরও ব্যবহারগুলো হলোঃ

**শসার রস ও লেবুর রস ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করে।

**অর্ধ ১টি লেবুর রসের সঙ্গে ১০ টেবিল চামচ দুধ মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন। এটি ধীরে ধীরে আপনার ত্বকে ম্যাসাজ করুন এবং অন্তত ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

**ডিমের সাদা অংশ,কমলা লেবুর রস তার সাথে লেবুর রস মিশ্রিত করে ত্বকে লাগাতে পারেন। এটি ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কমায় ও ত্বককে আরো উজ্জ্বল করে তুলে।

**চালের গুড়ার সঙ্গে একই পরিমাণ লেবুর রস মিশিয়ে ভালভাবে হাতে পায়ে লাগিয়ে নিন।এটি হাত ও পায়ের রুক্ষভাব দূর করে ও ত্বককে কোমল করে।

 

পেঁপে এবং ডিমের মাস্ক

পেঁপে ও ডিম দিয়ে একটি অসাধারন মিশ্রণ তৈরি করে মাস্ক হিসেবে ব্যবহারকরতে পারেন। ডিমে থাকা প্রোটিন ত্বকে টানটান রাখে। এর সঙ্গে দই যোগ করলে আপনার চেহার উজ্জ্বলতা বাড়বে। এই মাস্কটি নিয়মিত ব্যবহারের ফলে ত্বক আস্তে আস্তে ফর্সা হয়ে যায়।

পেঁপে-ডিমের মাস্ক তৈরির উপকরণ:

১ টি ডিমের সাদা অংশ,
পেঁপের রস ৩ চামচ,
দই ২ চামচ,
গ্লিসারিন,
অ্যাপেল সিডার ভিনিগার৪ চামচ ও
আমন্ড অয়েল ৩ চামচ।

পেঁপে-ডিম মাস্ক তৈরির পদ্ধতি 

ডিম ও গ্লিসারিন বাদে বাকি সকল উপকরণ একটি পাত্রে ভালো করে মিশিয়ে নিন।মিশ্রণটিকে একটি ঘন পেস্টের মতো তৈরি করুণ।অতঃপর মিশ্রণটিকে ২ ঘণ্টার মত ফ্রিজে রেখে দিন। ঘণ্টা দুয়েক পর মিশ্রণটি বের করে এর সাথে গ্লিসারিন ও ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে নিন।মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মত অপেক্ষা করুণ। ২৫ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখমণ্ডল ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।এভাবে নিয়মিত করার ফলে আপনার মুখশ্রী বৃদ্ধি পাবে।

 

মধুর এবং টমেটোর প্যাক

টমেটো এবং মধুর প্যাক রোদে পোড়া দাগ এবং অতিরিক্ত কালো দাগকে রক্ষা করতে পারে। টমেটোতে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল,অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল তাছাড়াও রয়েছে ভিটামিন সি, লাইকোপিন এর মতো গুণাগুন যা ত্বককে গভীর থেকে সুরক্ষা দেয়।

মধু ও টমেটোর প্যাক তৈরির পদ্ধতি 
একটি পাকা টমেটো এবং ৪ চামচ মধু একসঙ্গে চটকে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন। তারপর মিশ্রণটি মুখে লাগানোর ২০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এখন আপনার মুখ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন আপনার মুখমণ্ডল বেশ সতেজ লাগছে।এছাড়াও টমেটোর আরো কিছু ফেস প্যাক আছে যা মুখে লাগাতে পাড়েন। যেমন-(ক)টমেটো ও লেবুর ফেস প্যাক,(খ)টমেটো ও জোজোবা তেল,(গ) টমেটো ও চি ফেস প্যাক,(ঘ) টমেটো ও ওটস এর প্যাক।

ত্বকের যত্নে ওপরে উল্লেখিত টমেটোর প্যাক গুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলো আপনার ত্বক উজ্জ্বল ও কোমল করার সাথে সাথে আপনার চেহারার ডার্ক সার্কেল, স্কিনের বিভিন্ন দাগ ও ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে।

 

রূপচর্চায় কাঠবাদাম এর ব্যবহার

রূপচর্চায় কাঠবাদাম এর কোন তুলনা হয় না। এটি ত্বককে আরো উজ্জ্বল ও কোমল করে তুলে। এছাড়াও এটি ত্বকের মৃত কোষ গুলোকে দূর করে দেয়। কাঠবাদাম এর প্যাকটি তৈরি করতে ৪-৫ টি কাঠবাদাম সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখুন।সকালে এগুলোকে গুঁড়া করে বাটার মিল্কের সাথে মিশিয়ে অসাধারণ একটি প্যাক তৈরি করুন। এখন প্যাকটি ত্বকে লাগিয়ে প্রায় ১০ থেকে ১২ মিনিট অপেক্ষা করে পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ভালো ভাবে ধুয়ে ফেলুন। আপনি বাটার মিল্ক এর পরিবর্তে কাঠবাদামের সাথে মধু কিংবা টক দইও ব্যবহার করতে পারেন।

চেহারা নষ্ট হওয়ার কারণ

ঘুমের অভাব: চেহারা নষ্ট হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব।অপর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয় যেমন- চোখের নিচে কালো দাগ পরে,চেহারায় পরে ক্লান্তির ছাপ।দেহের ক্লান্তি দূর করতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো উচিত।পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম আপার চেহারাকে করে তুলবে উজ্জ্বল এবং দেহকে করবে আরো প্রাণবন্ত।

মাদকগ্রহণ ও ধূমপান: ধূমপান ও মাদকগ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক ও খুবই বাজে একটি অভ্যাস। অতিরিক্ত পরিমাণে অ্যালকোহল এবং তামাক জাতীয় দ্রব্য গ্রহণে চেহারার সৌন্দয্য ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায় এবং চেহারার তারুণ্য হারিয়ে যায় যা পুনরায় ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব।

তাপমাত্রার তারতম্যগত সমস্যা: শীতের সময় আমারা ঠাণ্ডা থেকে বাচঁতে অনেক সময় গরম আবহাওয়ায় থাকার চেষ্টা করি।এতে করে ত্বকের উজ্জ্বলতায় গরম আবহাওয়া বাজে প্রভাব ফেলে। গরমেও যদি এসিতে দীর্ঘ সময় থাকা হয় তাহলে খুব বেশি ঠাণ্ডায় ত্বকের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিভিন্ন ঋতুর প্রাকৃতিক তাপমাত্রা শরীরে লাগালে ত্বকের স্বাভাবিক মাত্রা নষ্ট হয় না। ত্বকের সৌন্দর্যও লোপ পায় না।

 

দুশ্চিন্তা করলে: প্রত্যেক মানুষের জীবনেই কমবেশি সমস্যা রয়েছে। তবে আপনি যদি কেবল এগুলো নিয়েই দুশ্চিন্তা করতে থাকেন,তবে এর একটি স্পষ্ট ছাপ আপনার চেহারায় ফুটে ওঠবে।অবসাদগ্রস্ত বা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত দের দেখলেই বোঝা যায়। তাই অপ্রয়োজনে চিন্তা করবেন না।

 

যা করবেন না- ত্বককে রাতারাতি ফর্সা করার জন্য বাজারে অনেক ধরনের কেমিকালযুক্ত পণ্য আছে। এসব বিষাক্ত প্রসাধনীর চটকদার বিজ্ঞাপন গুলো আপনাকে মাএ ৭ দিনে ফর্সা হওয়ার প্রলোভন দেখাবে। এসব দেখে একদম প্রতারিত হবেন না।নামহীন এসব ক্ষতিকারক প্রসাধনী ব্যবহারে আপনার ত্বক আজীবনের জন্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ সম্পর্কে অনলাইনে অনেক ভিডিও রয়েছে, যেগুলো রিসার্স করে আপনি বিভিন্ন বিউটি প্রোডাক্টের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানতে পারেন এবং এগুলো কেনা থেকে বিরত থাকতে পারেন।

শেষ কথা: আল্লাহ প্রদত্ত এক অমূল্য নেয়ামত হলো চেহারা। তাই বাজারে প্রচলিত কেমিকালযুক্ত প্রসাধনী ব্যবহার না করে,যতোটুকু সম্ভব প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বকের পরিচর্চা করুণ। এতে আপনার ত্বক সুস্থ্য থাকবে এবং দীর্ঘদিন ত্বকের তারুণ্যও বজায় থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button