জানাজার নামাজের নিয়ম, দোয়া, নিয়ত ও ফজিলত
জানাজার নামাজের নিয়ম
জানাজার নামাজের নিয়ম
ভালবাসা ও মায়াময় এই পৃথিবীর কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয়। একদিন সবকিছু ছেড়ে নশ্বর এই পৃথিবী থেকে চলে যেতে হবে সবাইকে। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, ‘প্রতিটি প্রাণকেই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে।’ তাই, বলা যায় যে, কেউ চিরস্থায়ী এই পৃথিবীতে থাকতে পারবেনা।
আমাদের জীবদ্দশাতেই আমাদের প্রিয়জনরা আমাদের ছেড়ে অন্ধকার কবরে চলে গিয়েছেন। অনিবার্য এ বাস্তবতার আঘাতে আমরা শোক-স্তব্ধ বিহ্বল হয়ে যাই। কিন্তু সেই সময়টা আরও খুব আফসোসের হয় যখন প্রিয়জনের বিদায় দেবার সময় জানাজার নামাজের নিয়ম না জানার কারণে প্রিয়জনের জানাজা নিজে পড়তে পারি না।
ইসলামে জানাজার নামাজের গুরুত্ব অনেক বেশি। শরিয়ত মতে, জানাজার নামাজ হচ্ছে ফরজে কিফায়া। মুসল্লিদের জন্য জানাজার নামাজ সাওয়াব বর্ধন ও মৃত ব্যক্তির জন্য সুপারিশ। মূলত মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার হচ্ছে জানাজার নামাজ। জানাজার লোক সংখ্যা বেশি হওয়া মুস্তাহাব। মৃত ব্যক্তির জানাজায় মুসল্লি সংখ্যা যত বাড়তে তত ভালো। তবে কাতার বেজোড় হওয়া উত্তম।
আমাদের মধ্যে অনেক মুসলিম ভাই রয়েছেন যারা জানাজার নামাজের নিয়ম সম্পর্কে অবগত নন। আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা জানাজার নামাজের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
আরও পড়ুন:
সালাতুল ইশরাক কি, ইশরাক নামাজের ফজিলত
নামাজের সানা বাংলা অর্থ সহ, আরবি ও আরবি উচ্চারণ
লাশের প্রকারভেদে জানাজার নিয়ম
ইসলামী শরিয়তে মৃত মানুষের প্রকারভেদ অনুয়ায়ী জানাজার বিভিন্ন নিয়ম রয়েছে। যেমন-
যদি মৃত ব্যক্তির মাথাহীন লাশের বেশির ভাগ পাওয়া যায় অথবা মাথাসহ অর্ধেক শরীর পাওয়া যায় তাহলে মৃত ব্যক্তির গোসল, কাফন ও জানাজা সবই করতে হয়। আর যদি মৃত ব্যক্তির লাশের মাথাহীন অর্ধেক বা তার চেয়ে কম অংশ পাওয়া যায় তাহলে গোসল, কাফন ও জানাজা করতে হয়না। শুধু কোনো কাপড়ে পেঁচিয়ে মাটির নিচে পুঁতে রাখতে হয়। তবে, মৃত ব্যক্তি নাস্তিক-মুরতাদ হলে গোসল, জানাজা ছাড়াই গর্ত করে কবর দিতে হয়। (ফাতাওয়া শামি, খণ্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ৯২)
যদি কোন নারী তার সতীত্ব রক্ষা করতে আত্মহত্যা করেন তাহলে ওই নারীকে শহীদ হিসেবে গণ্য করা হবে না। তবে দুশ্চরিত্র ও বখাটের হাতে যদি কোন নারী নিহত হয় তাহলে ওই নারী শহীদের মর্যাদা লাভ করবেন। কোন ব্যক্তি আত্মহত্যা করলে সাধারণ মুসলমানের নিয়মে গোসল, কাফন-জানাজা ও দাফন করতে হয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৭২)
জানাজার নামাজের ফযিলত
নবী কারীম (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘কোনো মুসলমান ব্যক্তির জানাজায় যে ব্যক্তি শরীক হয়ে নামাজ পড়ে এবং ওই ব্যক্তিকে কবরস্থ করে সে নামাজী ব্যক্তি দুই কীরাত নেকী পাবে। আর প্রত্যেক কীরাত উহুদ পাহাড় সমান নেকী। আর যে ব্যক্তি শুধু মৃত ব্যক্তির জানাজার নামাজ পড়ে কিন্তু মাটি দেয় না সে এক কীরাত নেকী পাবে।’ (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
তিনি আরও এরশাদ করেছেন, ‘কোনো মুসলমানের জানাজায় যদি এমন চল্লিশজন লোক শরীক হয় যারা মহান আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করেননি, তারা যদি মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করে তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাদের সুপারিশ নিশ্চয়ই কবুল করবেন।’ (সহীহ মুসলিম ও মিশকাত)
আল হাদীসে রয়েছে: ‘যে ব্যক্তি জানাজাকে নিয়ে চল্লিশ কদম চলবে আ্লাহ তার চল্লিশটি কবীরা গুনাহ্ মাফ করে দিবেন।’ এছাড়া, যে ব্যক্তি জানাযার চার‘টি পায়াকে কাঁধে নিবে আল্লাহ্ তা‘কে পরিপূর্ণ (স্থায়ী) ক্ষমা ক‘রে দিবেন।’ (আল জাওহারাতুন নায়্যারাহ্, ১ম খন্ড, ১৩৯ পৃষ্ঠা। বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৮২৩ পৃষ্ঠা। দুররে মুখাতার, ৩য় খন্ড, ১৫৮-১৫৯ পৃষ্ঠা।)।
বি.দ্র: উল্রেখিত সর্বশেষ হাদিসটি জাল কি সঠিক তা নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে।
এক নজরে জানাজার নামাজ আদায় ও দাফনের লাভ
- জানাজায় অংশগ্রহণে সুন্নাতে‘র অনুসর‘ণে আল্লাহর বান্দা‘র একটি হক আদায় হয়।
- জানাজায় অংশ গ্রহন করলে ১ ক্বীরাত নেকী পাওয়া যায়।
- কেউ মৃতব্যক্তির দাফনের উদ্দেশ্যে তার খাঁঁটিয়া কাঁঁধে নিয়ে ৪০ কদম হাঁঁটলে ৪০টি কবীরা গোনাহ ক্ষমা করা হয়।
- একইসাথে মৃত ব্যক্তির জানাজার নামাজ আদায় ও মৃত ব্যক্তির দাফন করলে মোট ২ ক্বীরাত নেকী পাওয়া যায়।
উপরোক্ত হাদিসগুলো থেকে জানাজার নামাজে শরীক হওয়ার ফলে নিজের ও মৃত মানুষের লাভের কথা জানলাম। তাই, আমরা সবসময় চেষ্টা করবো মৃত ব্যক্তির জানাজায় শরীক হতে।
আরও পড়ুন:
ওযু কাকে বলে? ওযুর ফরজ কয়টি ও কি কি?
জানাযার নামাজের ফরজ ও সুন্নাত
জানাজার নামাজের দুইটি ফরজ রয়েছে । যথা-
ক) চারবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলা।
খ) দাঁড়ানো।
তবে, জানাজা সহিহ হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে লাশ উপস্থিত থাকা।
এছাড়া, জানাজার তিনটি সুন্নত রয়েছে। যথা-
ক) আল্লাহর হামদ ও সানা পড়া।
খ) নবীজি (সা.)-এর ওপর দরুদ পড়া।
গ) মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা। (ইলাউস সুনান : ৮/১৭৪)
জানাজা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিধান
মৃত নবজাতকের জানাজার নিয়ম
যদি কোন শিশু মায়ের গর্ভ থেকে মৃত জন্ম নেয় তাহলে ওই শিশুর জানাযা পড়ার নিয়ম নেই। এক্ষত্রে মৃত ভূমিষ্ট হওয়া শিশুর সুন্দর একটি ইসলামিক নাম রেখে গোসল করিয়ে একটি কাপড়ে পেঁচিয়ে দাফন করা হয়। ওই বাচ্চার জানাযা ও কাফন দিতে হবে না ৷
জানাজা পড়ানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি
মৃত ব্যক্তি যদি মৃত্যুর আগে কোন ন্যায়নিষ্ঠ ও পরহেযগার ব্যক্তিকে অছিয়ত করে থাকেন তাহলে ওই ব্যক্তি মৃত ব্যক্তির জানাজা পড়বেন। কোন ব্যক্তিকে অছিয়ত করে না গেলে ‘আমীর’ বা তাঁর প্রতিনিধি অথবা মৃত ব্যক্তির কোন যোগ্য নিকটাত্মীয়, নতুবা স্থানীয় মসজিদের ইমাম বা অন্য কোন মুত্তাক্বী আলেম জানাযায় ইমামতি করতে পারবেন। একজন মৃত ব্যক্তি মৃত্যুর আগে দুই জন ব্যক্তির নামেও অছিয়ত করে যেতে পারেন।
মৃত ব্যক্তির জানাযার নামাযে যদি একইসাথে মৃতের ওলি ও মহল্লার ইমাম উপস্থিত থাকেন সেক্ষেত্রে কে জানাজা পড়াবে। এক্ষেত্রে বিধান হলো- মহল্লার ইমাম যদি আমলের দিক থেকে মৃতের ওলিদের থেকে বেশি যোগ্য হন তাহলে ইমামই জানাযা পড়ানোর বেশি হকদার।
জানাযার সালাতে ইমামের দাঁড়ানোর স্থান
আবূ গালিব (রহঃ) বলেন, “আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে এক মৃত ব্যক্তির জানাজার নামাজ পড়তে দেখলাম। তিনি ওই মৃত ব্যক্তির মাথা বরাবর দাঁড়ান। পরে আরেকটি মহিলার লাশ উপস্থিত করা হয়। এসময় উপস্থিত লোকেরা বললো, হে আবূ হামযা! তার জানাযার সালাত পড়ুন। তিনি খাটের মাঝ বরাবর দাঁড়ালেন।
তখন আল ইবনু যিয়াদ (রহ.) তাকে বললেন, হে আবূ হামযা! আপনি পুরুষের জানাজায় যেভাবে দাঁড়িয়েছেন, মহিলার জানাজায়ও আপনি যেভাবে দাঁড়িয়েছেন, রাসূলুল্লাহ (স:) কেও সেভাবে দাঁড়াতে দেখেছেন কি? তিনি বলেন, হ্যাঁ। তিনি আমাদের দিকে ফিরে বলেনঃ তোমরা স্মরণ রেখো।” (তিরমিযী ১০৩৪, আবূ দাউদ ৩১৯৪ মিশকাত ১৬৭৯। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ)
জানাজা নামাজের কাতার
জানাজার নামাজ বিশেষ দোয়া। এ নামাজ বা সালাত ফরজে কেফায়া। জানাজার নামাজের কাতার সম্পর্কে রয়েছে দিকনির্দেশনা। তবে, সে দিকনির্দেশনা কী?
মৃত ব্যক্তির জানাজা নামাজে অংশগ্রহণ এবং মৃত ব্যক্তির দাফন থাকার ফজিলত অনেক বেশি। কিন্তু এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, অনেক মৃত ব্যক্তির জানাজায় বেজোড় কাতার করতে বলা হয়। এছাড়াও, মৃত ব্যক্তির জানাজায় কাতারের সংখ্যা বেশি করতে বলা হয়।
অনেক মৃত ব্যক্তির জানাজায় দেখা যায়, যদি কাতার জোড় সংখ্যা যেমন, ২,৪, ৬ ইত্যাদি হয়ে যায়, তাহলে তা ভেঙ্গে ভেঙে ৩, ৫, ৭ ইত্যাদি অথ্যাৎ বেজোড় কাতার করা হয়। তবে, প্রশ্ন হচেছ এমনটি করা কি আবশ্যক?
জানাজার কাতার সম্পর্কে একাধিক হাদিসের বর্ণনা রয়েছে। যথা:
হজরত মারসাদ ইবনু আবদুল্লাহ আল-ইয়াযানি (রা:) বলেন, যখন সাহা‘বি হজরত মালিক ইবনু হুবাইরা (রা:) জানাজার নামাজ আদায় করতেন, তখন মৃত ব্যক্তির জানাজায় লোকজনের উপস্থিতি কম হলে তিনি উপস্থিত লোকদের তিন সারিতে ভাগ করতেন। তারপর তিনি বলতেন, রাসুলুল্লাহ (স:) বলেছেন, যে ব্যক্তির জানাজা‘র নামা‘জে তিন কাতা‘র লোক আদা‘য় করে‘ছে, তার জন্য (জান্নাত) অবধারিত হয়েছে।’ (তিরমিজি, আবু দাউদ)
হজরত জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রা:) বলেন, রাসুল (স:) (আবিসিনিয়ার বাদশাহ) নাজ্জাশির জানাজা আদায় করেন। আমি ২য় অথবা ৩য় কাতারে ছিলাম।’ (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)।
প্রথম হাদিসের উপর আমল করতে ইসলামিক স্কলাররা মৃত ব্যক্তির জানাজায় মুসল্লির সংখ্যা কম হলে তিন কাতার করার ব্যাপারে পরামর্শ দেন। এর ফলে সমাজে একটি বিষয় প্রচলিত হয়ে গেছে যে, জানাজার কাতার বেজোড় হওয়া জরুরী। তবে, এমন ধারণা সঠিক নয়। এটি ইসলামের আবশ্যক কোনো বিধান নয়।
জানাযা নামাজ পড়ার নিয়ম
জানাযার নামাজ আদায় হলো ফরজে কি‘ফায়া। মৃত ব্যক্তির জানাজার নামাজ চার তাকবীরের সাথে আদায় করতে হয়।
জানাজা নামাজের নিয়ম-
১. ১ম তাকবীরের পর ছানা পড়তে হবে।
২. ২য় তাকবীরের পর দরূদ পড়তে হবে।
৩. ৩য় তাকবীরের পর দুআ পড়তে হবে।
৪. ৪র্থ তাকবীরের পর সালাম ফিরাতে হবে।
হাত উঠানো : জানাজার নামাজে শুধু প্রথম তাকবীর সময় উঠাতে হবে। অন্যান্য তাকবীরে হাত ওঠানোর বিধান নেই।
জানাজার নামাজের দোয়া
জানাজা নামাজের নিয়ত
মৃত ব্যক্তি পুরুষ না মহিলা তা আগে ইমাম সাহেব জানিয়ে দিবেন। তারপর সে অনুযায়ী নিয়ত করতে হবে।
জানাযার নিয়ত মুখে উচ্চারণ করে পড়া জরুরী নয়। নিয়ত শুধু আরবীতে পড়তে হবে এমনও বিধান নেই। নিয়ত বলতে মূলত মনের ইচ্ছাকে বুঝায়। মৃত ব্যক্তির জানাজার নামাজের নিয়ত মনে মনে করলেই হবে।
আপনি নিয়ত করার সময় মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করে নিবেন। আপনার মনে যেভাবে নিয়ত আসে আপনি চাইলে সেভাবেই নিয়ত করতে পারবেন। যেমন:
আমি ক্বিবলামুখী হয়ে মৃত ব্যক্তির জানাজার নামাজ আদায়ের জন্য চার তাকবিরের সাথে ইমামের পিছনে দাঁড়িয়ে মৃত ব্যক্তির (পুরুষ বা মহিলা) জন্য দোয়া করার উদ্দেশ্যে আদায় করছি। আল্লহু আকবার।
তবু আগ্রহীদের জন্য নিচে আরবিতে নিয়ত উল্লেখ করা হলো-
প্রথম তাকবিরের পর ছানা পড়া
প্রথম তাকবীর বলার সময়, ‘আল্লহু আকবার’ বলে, কান পর্যন্ত দুই হাত তুলে হাত বেঁঁধে ছানা পড়তে হবে। তবে, নামাজার নামাজ ও সাধারণ নামাজের মধ্যে একটি শব্দের পার্থক্য রয়েছে। সেটি হলো, ‘ওয়াজাল্লাছানা-উকা।’
জানাজার ছানার বাংলা উচ্চারণ
বহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়াবিহামদিকা, ওয়াতাবারকাসমুকা, ওয়াতাআ’লা জাদ্দুকা, ওয়া ঝাল্লা ছানাউকা, ওয়ালা ইলাহা গাইরুকা।
দ্বিতীয় তাকবিরের পর দরুদ পড়া
মৃত ব্যক্তির জানাজা নামাজের ছানা পড়ার পর, দ্বিতীয় তাকবীরে ‘আল্লহু আকবার’ বলে দরুদে ইবরাহীম পড়তে হবে।
দরুদ শরীফ
দুরুদ শরীফ বাংলা উচ্চারণ
আল্লাহুম্মা সল্লিআ’লা মুহাম্মাদিউ ওয়া আলা আলিমুহা’ম্মাদ, কামা সাল্লাইতা আ’লা ইবরাহিমা ওয়া-আ’লা আলি ইবরহিমা, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আ’লা মুহাম্মাদিও ওয়া-আ’লা আলি মুহাম্মাদ, কামা বারাকতা আলা ইবরাহীমা, ওয়া আ’লা আলি ইবরাহিমা, ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ।
দুরুদ শরীফ বাংলা অর্থ
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ (সা:) ও তাঁর বংশধরের প্রতি রহমত নাযিল করুন যেমন রহমত নাযিল করেছিলে ইবরাহীম (আ:) ও তাঁর বংশধরের প্রতি। নিশ্চয় অত্যন্ত প্রশংসিত ও মহামহিমান্বিত। হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ (স: ) ও তাঁর বংশধরের প্রতি বরকত নাযিল করুন যেমন বরকত নাযিল করেছিলেন ইবরাহীম (আ:) ও তাঁর বংশধরের প্রতি। নিশ্চয় আপনি প্রশংসনীয় ও মর্যাদাবান। (সহীহ বুখারী, হাদীস:২৯৭০)
তৃতীয় তাকবিরের পর জানাজার দোয়া পাঠ
দরুদ শরীফ পাঠ করে তৃতীয় তাকবীরের পর জানাযার দোয়া পড়তে হয়। প্রাপ্ত বয়স্ক (পুরুষ বা মহিলা), অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক ও বালিকার জানাযার দোয়া ভিন্ন।
প্রাপ্ত বয়স্ক মৃত ব্যক্তির জানাজার দোয়া
মৃত ব্যক্তি যদি বালেগ অথাৎ প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ বা মহিলা হয় তবে এই দোয়া পড়া হয়—
জানাজার দোয়া বাংলা উচ্চারণ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগফি হাইয়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়িবিনা ওয়া সগিরিনা ওয়া কাবিরিনা ওয়া জাকিরিনা ওয়া উনছানা। আল্লাহুম্মা মান আহইয়াইতাহু মিন্না ফাআহয়িহি আ’লাল ইসলাম। ওয়া মান তাওয়াফফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফফাহু আ’লাল ঈমান। আল্লাহুম্মা লা তাহরিমনা আঝরাহ ওয়া লা তুদিল্লানা বাআ’দা।(মুসনাদে আহমাদ, তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, মিশকাত)
অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক ও বালিকার জানাযার দোয়া
অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালকের জানাজার দোয়া
অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালকের জানাজার দোয়া বাংলা উচ্চারণ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাঝ্আ`লহু লানা ফার্ত্বাও ওয়াজআলহু লানা আজরাঁও ওয়া জুখরাঁও ওয়াঝ্আ`লহু লানা শাফিআ`ও ওয়া মুশাফ্ফিআ`।
অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালিকার জানাজার দোয়া
অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালিকার জানাজার দোয়া বাংলা উচ্চারণ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মাঝ্আ`লহা লানা ফার্ত্বাও ওয়াঝআ`লহা লানা আজরাঁও ওয়া জুখরাঁও ওয়াজআলহা লানা শাফিআ`তাও ওয়া মুশাফ্ফিআ`তান।’
চতুর্থ তাকবিরের পর সালাম ফেরানো
জানাযার দুআ পড়ার পর চুতর্থ তাকবীরের সময় প্রথমে ডানে ও পরে বামে ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি বলে ইমাম সালাম ফিরাবেন। ইমামকে অনুসরণ করে মুক্তাদীরাও জানাযা সম্পন্ন করবে।
জানাজায় রুকু-সিজদা নেই কেনো?
জানাজার নামাজে রুকু-সিজদা না থাকার দুটি কারণ নিম্নে উল্লেখ্য করা হলো-
মৃত ব্যক্তির লাশকে সামনে রেখে জানাজার নামাজ আদায় করা হয়। যদি অন্য নামাজের ন্যায় জানাজার নামাজেও রুকু-সিজদা করা হয়, তাহলে জন সাধারণের মাঝে এরকম ধারণা হতে পারে যে লাশের উদ্দেশে রুকু-সিজদা করা বৈধ।
তাই, মৃত ব্যক্তির লাশ সামনে রেখে রুকু ও সিজদা কর‘লে শিরক এর সম্ভাবনা থেকে যায়। মুসলিম উম্মাহকে শিরক ধারণা থেকে রক্ষা করতে জানাজার নামাজে রুকু ও সিজদার বিধান দেওয়া হয়নি।
এছাড়া, রুকু-সিজদায় নিজের সর্বনিম্ন অক্ষমতা, অপদস্থতা এবং মহান আল্লাহর সীমাহীন মর্যাদা, বড়ত্ব, মহত্ত্ব প্রকাশ করা হয়। জানাজার নামাজে মহান আল্লাহর প্রশংসা, গুণাগুণ এবং অন্যদের জন্য ক্ষমা চাওয়া হয়। কারণ, জানাজার নামাজ হলো মৃত ব্যক্তির পক্ষে শুধুই সুপারিশ। রুকু ও সিজদার কারণ এবং উদ্দেশ্য এর বিপরীত। তাই জানাজার নামাজে রুকু ও সিজদার বিধান দেয়া হয়নি।
জানাজার জরুরি মাসায়েল
- মাসআলা : মৃত ব্যক্তির জানাজায় ছানা, দরূদ ও দুআর পরে যে আরো তিনবার তাকবীর বলা হয় তখন ইমাম ও মোক্তাদীর হাত বাঁধা থাকবেন।
- মাসআলা : তাকবীর ব্যতীত ইমাম সবকিছু চুপে চুপে বলবেন। তবে, তাকবীর উচ্চস্বরে বলবেন। মোক্তাদীরা তাকবীরসহ সবকিছুই আস্তে আস্তে বলবেন।
- মাসআলা : ডান দিকে সালাম ফিরানোর সাথে সাথে ডান হাত ও বাম দিকে সালাম ফিরানোর সাথে সাথে বাম হাত নামিয়ে ফেলবেন।
- মাসআলা : মৃত ব্যক্তির জানাজার নামাজের পর আর কোনো মোনাজাত এক সাথে করার নিয়ম নেই।
- মাসআলা : জানাজার নামাজ ছুটে যাওয়ার আশংকা হলে অথ্যাৎ পানি নিকটে না পাওয়া গেলে তায়াম্মুম করে জানাজায় শরীক হওয়া যায়।
- মাসআলা : জুতা পায়ে রেখেও জানাজার নামাজ আদায় করা যায়। তবে শর্ত এই যে জুতার তলা এবং জুতার নিচে জায়গা পাক হতে হবে। তবে, কেউ যদি জুতা খুলে জুতার উপরে পা রেখে দাঁড়ায় তাহলে পায়ের সাথে লেগে থাকা জুতার উপরের অংশ পাক থাকলেই চলবে।
#######
I couldn’t resist commenting. Very well written!
I really like your blog.. very nice colors & theme. Did you make this website yourself or did
you hire someone to do it for you? Plz answer back as I’m looking to create my own blog and would like to find out where u got this from.
appreciate it
Hi there, just wanted to mention, I enjoyed
this post. It was inspiring. Keep on posting!