সরকারি অফিসে ‘রোহিঙ্গা রুম’, কাজ না করিয়েও দেওয়া হতো বেতন

স্টাফ রিপোর্টার
অত্যাবশকীয় ৩৩টি ওষুধের দাম ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়েছে রাষ্ট্রীয় একমাত্র ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল)। গতকাল বুধবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ইডিসিএলের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ইডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামাদ মৃধা।

প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, গত ৬০ বছরের ইতিহাসে গত ছয় মাসের মতো এত অগ্রগতি হয়নি। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে অধিকাংশ ওষুধের দাম কমানো সম্ভব হবে। এতে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে।

সংবাদ সম্মেলনে ইডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, ‘বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি শুধু অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ উৎপাদনের দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এর আগে বড় অংশজুড়ে ছিল অপ্রয়োজনীয় ওষুধ। তবে সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূর জাহান ও বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান স্পষ্টভাবে বলেছেন, এই খাতের আসল লাভ মানুষের সুস্থতা।’

সামাদ মৃধা বলেন, ‘‘আগে কাঁচামাল কেনা হতো অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়। আমরা এখন টেন্ডারভিত্তিক, প্রতিযোগিতামূলক ও স্বচ্ছ ব্যবস্থায় ওষুধের কাঁচামাল সংগ্রহ করছি। তদারকি জোরদার করার ফলে উৎপাদনের মানও বেড়েছে। উৎপাদনে দক্ষতা বাড়াতে ওভারটাইম কমানো হয়েছে, যাতে ব্যয় হ্রাস পেয়েছে। কর্মীদের উৎসাহিত করতে ‘মোটিভেশনাল প্রোগ্রাম’ নেওয়া হয়েছে। শ্রমিক ও ইউনিয়নের সঙ্গে গড়ে তোলা হয়েছে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক। পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালগুলোর জন্য নিরবচ্ছিন্ন ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরবরাহ চেইন ব্যবস্থাপনা উন্নত করা হয়েছে।’’

জনবল কাঠামোতে বড় রকমের সংস্কারের কথা জানান ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে অদক্ষ ও অপ্রয়োজনীয় হিসেবে চিহ্নিত ৭২২ জন কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে। আরও এক হাজারের বেশি কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

ইডিসিএলের এই শীর্ষ এই কর্মকর্তা বলেন, ‘‘কোম্পানির উৎপাদনক্ষমতার তুলনায় দুই হাজারের বেশি বাড়তি জনবল ছিল। এদের অনেকের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ জাল এবং বেশির ভাগই অদক্ষ। তারা কোনো কাজ না করেই দীর্ঘদিন ধরে বেতন ভোগ করছিল। বিগত সরকারের আমলে অনেককে পছন্দমতো নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এমনকি একটি কক্ষে কর্মীদের বসিয়ে রেখে বেতন দেওয়া হতো, যার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘রোহিঙ্গা রুম’। এমন অপচয় আর হতে দেওয়া যাবে না।’’

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘বিশ্বব্যাপী বায়োলজিক্যাল পণ্য যেমন ইনসুলিন ও ইরিথ্রোপোয়েটিনের চাহিদা বাড়ছে। এ কারণেই ইডিসিএল এখন শুধু সাধারণ ওষুধ নয়, বরং ভ্যাকসিন ও বায়োলজিক্যাল পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যেও কাজ শুরু করেছে। ইডিসিএল এখন আর কেবল একটি ঐতিহ্যবাহী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নয়, এটি হয়ে উঠছে ভবিষ্যতমুখী, আধুনিক, দক্ষ এবং জনগণের স্বাস্থ্যসেবায় প্রতিশ্রুতিশীল একটি প্রতিষ্ঠান।’

সামাদ মৃধা আরও বলেন, ‘ইডিসিএলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় রয়েছে দুটি আধুনিক প্ল্যান্ট নির্মাণ। একটি বায়োটেক প্ল্যান্ট, যেখানে ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রস্তুতি চলছে। অপরটি নির্মাণ হচ্ছে ঢাকার অদূরে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে, যা এফডিএর গাইডলাইন অনুযায়ী আধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মিত হচ্ছে।’

/আইএস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button