বাংলায় ও আরবিতে রোজার নিয়ত শিখুন

বাংলায় ও আরবিতে রোজার নিয়ত

রোজার নিয়ত করা কি ফরজ ?

এ প্রসঙ্গের প্রায় সকল আলেমগন প্রায় একই মতামত দিয়েছেন। রোজার নিয়ত করা ফরজ। রোজার জন্য মৌখিক নিয়ত করা জরুরি নয়; বরং অন্তরে রোজার সংকল্প করাই যথেষ্ট। এমনকি রোজার উদ্দেশ্যে সাহরি খেলেই রোজার নিয়ত হয়ে যায়। সুতরাং এমন কথা ভাবার মত কোন সুযোগ নেই যে, যদি কেও মুখে রোজার নিয়ত না করে তবে রোজা হবে না। তবে মুখে নিয়ত বলা মুস্তাহাব।

কেউ যদি নিয়ত করে রোজা রাখতে চায়, তা হলে এভাবে নিয়ত করতে হবে ‘আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আজকে রোজা রাখছি।’ আর ইবাদতের সওয়াব নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। হাদিস শরিফে আছে, ‘সব আমল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।’ (বোখারি : ১/২)।

রোজার নিয়ত কি আরবিতেই করতে হবে?

রোজার নিয়ত করার ক্ষেত্রে আরবি যদি ভালোভাবে বলতে পারেন ও বুঝতে পারেন তবে আরবিতেই নিয়ত যাবে। অন্যথায় বাংলায় নিয়ত করাই উত্তম। কেউ আরবিতে নিয়ত করলে এরূপ বলবে ‘নাওয়াইতুআন আসুমা গাদাম মিন শাহরি রমাদান।’ অর্থাৎ ‘রমজান মাসের আগামীকালের রোজা রাখার নিয়ত করছি।’ মুখে উচ্চারণ করার মাধ্যমে নিয়ত করা উত্তম। (বেহেশতি জেওর : ৩/৩)।

নিয়তের ক্ষেত্রে অন্তরের সুদৃঢ় কর্মতৎপরতা গ্রহণযোগ্য। কাজেই শুধু মুখের উচ্চারণ কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়, যদি তা অন্তরের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হয়। কেননা শুধু মুখের উচ্চারণকে কথা বলা হয়; নিয়ত বলা হয় না। (দুররুল মুখতার : ২/৯১)।

রমজান মাসে সাহরি খাওয়াটাও রোজার নিয়ত বলে গণ্য হবে। তবে সাহরি খাওয়ার সময় রোজা রাখার ইচ্ছা না থাকলে তা নিয়ত বলে গণ্য হবে না। (কিতাবুল ফিকাহ : ১/৮৮১)।

রোজার নিয়ত কখন করবো?

ফরজ রোজার নিয়ত রাতেই করা উত্তম। উম্মুল মুমিনিন হাফসা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন ‘যে ব্যক্তি ফজরের আগে রোজা রাখার নিয়ত করবে না তার রোজা (পূর্ণাঙ্গ) হবে না।’ (আবু দাউদ : ১/৩৩৩)।

রাতে যদি কেও নিয়ত করতে না পারে তবে দিনে বেলায় সূর্য ঢলার প্রায় এক ঘণ্টা পূর্বে নিয়ত করলেও রোজা হবে এমন বিধান রয়েছে।

হজরত সালামা ইবনুল আকওয়া (রা.) বলেন, (যে সময় আশুরার রোজা ফরজ ছিল সেই সময়ে) রাসুলুল্লাহ (সা.) আসলাম গোত্রের এক ব্যক্তিকে ঘোষণা দিতে বললেন, ‘যারা সকাল থেকে কিছু খায়নি তারা বাকি দিন রোজা রাখবে। আর যারা খেয়েছে তারাও বাকি দিন রোজা রাখবে। কারণ আজ আশুরা দিবস।’ (বোখারি : ২০০৭)।

প্রত্যেক রোজার নিয়ত পৃথক পৃথকভাবে করতে হবে। কারণ প্রতিটি রোজা ভিন্ন ভিন্ন আমল বা ইবাদত। আর প্রতিটি আমলের জন্যই নিয়ত করা জরুরি। পুরো রমজানের জন্য একত্রে নিয়ত করা যথেষ্ট নয়। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/১৯৫)।

রাতে (সাহরির সময় থাকা অবস্থায়) রোজার নিয়ত করলেও সুবহে সাদেক পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী মিলনের অবকাশ থাকে। এতে নিয়তের কোনো ক্ষতি হবে না। অনেকে মনে করেন, রোজার নিয়ত করার পর কিছু পানাহার করা যাবে না। এমন ধারণা ঠিক নয়। মূলত রোজার নিয়তের সময় শুরু হয় আগের দিনের সূর্যাস্তের পর থেকে। যেমনঃ বুধবারের রোজার নিয়ত মঙ্গলবারে দিবাগত রাত তথা সূর্যাস্তের পর থেকে করা যায়। কিন্তু মঙ্গলবার সূর্যাস্তের আগে বুধবারের রোজার নিয়ত করা যথেষ্ট নয়। (রদ্দুল মুহতার : ২/৩৭৭)।

রোজার নিয়ত কি শব্দ করে করতে হবে?

আমাদের দেশে রমজান মাস এলে রোজার নিয়ত নিয়ে অনেকেই খুবই বিব্রত থাকেন। কিভাবে রোজার নিয়ত করবেন তা নিয়ে বিভ্রান্তির কোন শেষ নেই। আবার অনেকেরই ধারণা রোজার নিয়ত অবশ্যই মুখে উচ্চারণ করে বলতে হবে, আসলে ধরনের ধারণার কোন ভিত্তি নেই। আপনি চাইলে মুখে বলতে পারেন অথবা নিজের মনে মনেও বলতে পারেন।

তাই এ ধরনের কথার কোন ভিত্তি নেই যে মুখে রোজার নিয়ত না করা হলে রোজা হবে না। তবে কেউ যদি মুখে রোজার নিয়ত করতে চাই সেক্ষেত্রে সুবেহ সাদিকের পূর্বে এভাবে নিয়ত বলতে হবে যে ‘ আজ রোজা রাখব কিংবা দিনে আনুমানিক ১১ টার পূর্বে নিজ মনে মনে নিয়ত করবে যে আমি রোজা রাখলাম। মনে রাখবেন মুখে নিয়ত করা কখনোই জরুরী নয় তবে মুখে নিয়ত করা মুস্তাহাব (রদ্দুল মুহতার: ২/৩৭৭)

রোজার নিয়তের ক্ষেত্রে আরবি ভালোভাবে বলতে পারলে ও বুঝলে আরবিতে নিয়ত করা যাবে। অন্যথায় বাংলায় নিয়ত করাই ভালো।

আরবি তে রোজার নিয়তঃ

আরবিতে রোজার নিয়ত অনেকে খুজে পান না। আবার অনেকে আরবি তে রোজার নিয়ত খুজার জন্য বিভিন্ন ইসলামি বই খুজেন। কিন্তু, বর্তমানে সকল ইসলামিক বিষয় নিয়েই অনলাইনে সুন্দর আলোচনা রয়েছে। একটু সময় দিলেই আপনি ইসলামিক জ্ঞান কে সমৃদ্ধ করতে পারেন।

 বাংলায় ও আরবিতে রোজার নিয়ত
বাংলায় ও আরবিতে রোজার নিয়ত

আরবি তে রোজার নিয়ত শিখুনঃ

نويت ان اصوم غدا من شهر رمضان المبارك فرضا لك ياالله فتقبل منى انك انت السميع العليم

(নাওয়াইতু আন আছুমা গদাম মিং শাহরি রমাদ্বানাল মুবারকি ফারদ্বল্লাকা ইয়া আল্লাহু ফাতাক্বব্বাল মিন্নী ইন্নাকা আংতাস সামীউল আলীম)

রোজার নিয়তের অর্থঃ

অর্থ: হে আল্লাহ! আগামীকাল পবিত্র রমযান মাসে তোমার পক্ষ হতে ফরয করা রোজা রাখার নিয়ত করলাম, অতএব তুমি আমার পক্ষ হতে কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।

রোজার বাংলা নিয়তঃ

হে আল্লাহ পাক! আপনার সন্তুষ্টির জন্য আমি আগামীকালের রমাদান শরীফ-এর ফরয রোযা রাখার নিয়ত করছি। আমার জন্য আপনি তা কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা , সর্বজ্ঞাত।

 

মানব জাতির উপর রোজাকে ফরজ করা হয়েছে। এ উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহ তা‘লা ইরশাদ করেন: হে মুমিন সকল! তোমাদের উপর রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপরও ফরজ করা হয়েছিল। যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।  (সূরা বাকারা-১৮৩)।

রোজার নিয়ত জানার প্রয়োজনীয়তা

পবিত্র রমজান মাসে রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া জানা জরুরী হয়ে পড়ে। কারণ, যে কোন কাজ করার আগে নিয়ত করা আবশ্যক। অনেকে আছেন যারা রোজার নিয়ত বাংলা অথবা আরবিতে খুজে থাকেন। আজকের এই পোস্টে আমরা রোজার নিয়ত আরবী ও বাংলায় সম্পর্কে জেনেছি।

আরও পড়ুন-

ইফতারের দোয়া ও ইফতারের সময় করণীয়

সাহরি ও ইফতারের সময়সূচি ২০২২

ওযুর ফরজ কয়টি ও কি কি?

আরো দেখুন ভিডিওতেঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button