মন খারাপ হলে কেন মানুষ কষ্টের গান শোনে?

মন খারাপ হলে কেন কষ্টের গান শোনেন?

সবার জীবনেই কম বেশি সুখ-দুঃখ আসে। মানুষ যখন সুখে থাকে তখন যেমন হাসি-খুশি, সবার সাথে মিলেমিশে থাকে। তেমনি দু:খের সময় মানুষের মন খারাপ থাকে। এ সময় মানুষ একা একা থাকতে পছন্দ করে। নিজেকে অসহায় লাগে।

তবে, অধিকাংশ মানুষ যখন কষ্টে থাকে তখন নিজেকে সবার থেকে আড়াল করে কষ্টের গান শোনতে পছন্দ করেন। তবে এর কারণ কী?

আজকের এই পোস্টে এ বিষয়টি আপনাদের জানাবো। মানুষ দু:খের সময় কেন কষ্টের গান শোনেন। তাহলে চলুন শুরু করা যাক….

 

মানুষ কষ্টে থাকলে দু:খের গান শোনার কারণ

মানুষের অবসর সময় কাটানোর জন্য গান মুখ্য ভূমিকা পালন করে। প্রত্যেক মানুষ তার রুচি অনুযায়ী একেক ধরনের গান শোনতে পছন্দ করেন।  তবে, একটা সাধারণ ব্যাপার হলো দুঃখের সময় সকলেই দুঃখের গান বা ‍Sad Music শোনতে পছন্দ করেন। আসলে দুঃখের গান মানুষের নেতিবাচক আবেগ প্রকাশে সাহয্য করে। পরবর্তী সময়ে এ মানুষগণ আরও বাস্তববাদী হয়ে ওঠেন।

তাহলে কি দুঃখের গানগুলোই মেজাজ উন্নত করতে সাহায্য করে? আসল কথা হলো- দুঃখের কোন গানের কথাগুলিতে যখন কারো অভিজ্ঞতার কথা বলে, তখন আমরা তাৎক্ষণিকভাবে অনুভব করি শুধু আমরা একা নই। আমাদের মতো আরও অনেকে আছেন যারা আমাদের মতো এমন সমস্যায় পড়ছেন এবং সেখান থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। এসব ভেবে আমাদের মনের মধ্যে ইতিবাচক অনুভূতি জাগ্রত হয়।

 

এ বিষয়ে বিজ্ঞান কী বলছে?

গবেষণায় দেখা গেছে, দুঃখের গান শোনার মাধ্যমে মানুষ পায় মানসিক সুস্থতা। মিউজিক থেরাপি মানসিক প্রশান্তি, এমনকি মন মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করতেও সহায়তা করে। আরও কিছু গান শোনার উপকারিতা জেনে নিন…

 

গান শোনার উপকারিতা

 

প্রোলেকটিন হরমোন বাড়ায়

মানুষের দুঃখের গান শোনার অন্যতম কারণ হচ্ছে এটি প্রোলেকটিন হরমোন বৃদ্ধি করে। প্রোলেকটিন  হরমোনের বিভিন্ন ধরনের মানসিক প্রভাব রয়েছে। স্তন্যদানের সঙ্গে এর সংযোগ গভীর রয়েছে বলে জানা গেছে।

এটি নারী ও পুরুষ উভয়ের মঝেই নির্গত হয়। দুঃখ বা অন্য কোনো চাপের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এর বেদনানাশকের প্রভাব আমাদের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

আপনি যখনি শোকগ্রস্ত থাকেন, ঠিক তখন প্রোলেকটিন হরমোন প্রশান্তি ও সান্ত্বনার অনুভূতি তৈরি করে। দুঃখের গান এ হরমোনের নিঃসরণ বাড়ায়। ফলে মানসিক চাপ ও কষ্ট থেকে সহজেই মুক্ত হওয়া যায়।

 

নস্টালজিক করে তোলে

গবেষণার দেখা গেছে, মানুষের পুরোনো স্মৃতি মনে করিয়ে দিতে দুঃখের গান বড় ভুমিকা পালন করে।  নস্টালজিক স্মৃতি মনে পড়ার কারণে মানুষের মেজাজ উন্নত হয়। বিশেষ করে যখন স্মৃতিগুলো জীবনের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহ মুহূর্তের সঙ্গে সম্পর্কিত হয় (যেমন-বিয়ে,প্রেম,উচ্চ বিদ্যালয়,কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়)।

 

উদ্বেগ কমায়

গানের মাধ্যমে দূর হয় উদ্বেগজনক আবেগ। তাছাড়াও গানের মাধ্যমে দুঃখ ও রাগের মতো নেতিবাচক আবেগগুলোও দূর করা যায়। যখনি কেউ দুঃখের গান শুনে কান্না করেন; ঠিক তখনি তার হতাশা ও নেতিবাচক অনুভূতিগুলো দূর হয়ে যায়।

 

মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করা যায়

যে কোন গানের কথা ও সুর সকল মানুষকে প্রভাবিত করে। বিশেষ করে দুঃখের গান শোনার মাধ্যমে মেজাজকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। দুঃখের গান বা Sad Musci শ্রোতাকে কষ্টদায়ক পরিস্থিতি (যেমন-বিচ্ছেদ, মৃত্যু ইত্যাদি) থেকে দূরে সরে যেতে সাহায্য করে আর এর পরিবর্তে এটি গানের দিকে মনোনিবেশ করতে সাহায্য করে।

 

সঙ্গ দেয়

যখন কোন ব্যক্তি প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে থাকেন এবং একাকিত্ব অনুভব করে; তখন সংগীত ওই ব্যক্তিকে সঙ্গ দেয়। কষ্টের সময় দুঃখের সংগীতকে কাল্পনিক বন্ধু হিসেবে অনুভব করা যেতে পারে।

গান শোনার মাধ্যমে মেজাজ, আবেগ,স্মৃতি ও মনোযোগ প্রভাবিত হয় বলে অনেক গবেষণায় প্রমাণিত। মানসিক প্রশান্তি পেতে এ কারণে মিউজিক থেরাপি বেশ কার্যকরী।

মানসিক চাপ কমানোর জন্য এক গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের একাংশকে ওষুধ দেওয়া হয়েছিল এবং আরেক অংশকে গান শোনানো হয়েছিলো।

পরবর্তীতে দেখা যায়, যে রোগীদের গান শোনানো হয়েছিল, তাদের উদ্বেগ কম ছিল। তাদের ওষুধ সেবনকারীদের তুলনায় কর্টিসল ছিল কম।

দেখা যায় যে, সংগীত ওষুধের তুলনায় কম ব্যয়বহুল, সংগীত শরীরের জন্য উপকারী এবং কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই (ফিন অ্যান্ড ফ্যানকোর্ট, ২০১৮ এর তথ্য মতে)।

##

বি.দ্র: পোস্টের মাধ্যমে মানুষের মন খারাপ থাকলে কেন গান শুনেন? সে বিষয়ে জানতে পারলাম।  আশা করি পোস্টটি আপনার ব্যক্তিগত জীবনে কাজে আসবে। ভাল লাগলে পোস্টটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button