ভিকারুননিসায় ওড়না পরাদের বের করে দেওয়ায় ক্ষোভ

জড়িত শিক্ষকের শাস্তি দাবি

স্টাফ রিপোর্টার
রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বসুন্ধরা শাখায় ওড়না পরা শিক্ষার্থীদের ক্লাস থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট মহলে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ ঘটনায় জড়িত শিক্ষক ফজিলাতুন নাহারের শাস্তি দাবি করেছেন অনেকে।

তবে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাজেদা বেগম জানান, তারা হিজাব পরায় কোনো বাধা দেন না। স্কুলের নির্ধারিত হিজাব আছে। সব শাখায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে হিজাব পরতে পারেন। বসুন্ধরা শাখায় দুটি মেয়ে ওড়না পরে আসার কারণে তা ঠিক করে পরতে বলা হয়। বিষয়টি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির সমাধান হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট দুই ছাত্রী লিখিতভাবে তাদের বক্তব্য জানিয়েছে।

এর আগে গত রোববার অভিযোগ পাওয়া যায়, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত ভিকারুননিসা নূন স্কুলের প্রভাতী শাখার ষষ্ঠ শ্রেণির ২০ থেকে ২২ জন শিক্ষার্থী হিজাব পরে আসেন। ওই অবস্থায় সব ক্লাসে তারা উপস্থিত থাকলেও কোনো শিক্ষকই তাদের হিজাব নিয়ে কোনো আপত্তি করেননি। কিন্তু শেষ পিরিয়ডের ইংরেজি শিক্ষক ফজিলাতুন নাহার শিক্ষার্থীদের ক্লাস থেকে বের করে দেন। এ সময় তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয় বলেও জানান অভিভাবকরা। এমনকি ওড়না পরায় তাদের জঙ্গির মতো লাগছে, এমন মন্তব্য করার অভিযোগও করেন একজন অভিভাবক।

এ বিষয়ে শিক্ষক ফজিলাতুন নাহার গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের স্কুলের একটা ড্রেস কোড আছে। এখানে কেউ পর্দা করতে হলে সাদা স্কার্ফ পরে আসতে হবে। কিন্তু অনেকেই ওড়না পরে এসেছে। এ জন্য তাদের ক্লাস থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।

অন্য ক্লাসের শিক্ষকরা এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নিলেও আপনি কেন নিলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্য শিক্ষকরা কী করল, সেটা তাদের বিষয়। কিন্তু স্কুলের নিয়ম অনুযায়ী যারা আসবে না, তাদের তো আমাদেরই শেখানোর দায়িত্ব। আমি তাদের শেখানোর জন্যই এই কাজ করেছি।

এ বিষয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাজেদা বেগম আমার দেশকে বলেন, এ বিষয়ে শিক্ষকদের মাধ্যমে তদন্ত করে জানা গেছে যে, শেষ পিরিয়ডে ক্যাপ্টেনরা ছাত্রীদের চুলের বেণি, তেল মাখা, জুতা ইত্যাদি বিষয়ে নির্দেশনা মানছে কি না, তা চেক করা হচ্ছিল। সে সময় ২০ জনের একটি লিস্ট শিক্ষককে দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে দুজন ওড়না পেঁচিয়ে পরেছিল। এভাবে না পরে সঠিক নিয়ম শেখানোর জন্য তাদের ভলান্টিয়ারদের কাছে নেওয়া হয় (বড় আপু)।

তিনি আরো বলেন, আমাদের স্কুলের হিজাব কিনতে পাওয়া যায়। এখানে হিজাবে বাধা নেই। এদিকে ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ধর্মপ্রাণ হিজাবি ছাত্রীদের ‘জঙ্গি’ অপবাদ দিয়ে ক্লাস থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব আল্লামা সাজেদুর রহমান।

গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে তারা এ ঘটনাকে মানবাধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতার চরম লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করে ইসলামবিদ্বেষ আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বলে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক এ ঘটনায় জড়িত শিক্ষিকাকে অবিলম্বে বহিষ্কার করার দাবি করেছেন। এছাড়া বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি ও ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুর রকিব অ্যাডভোকেট যুগ্ম মহাসচিব মুখপাত্র মাওলানা মো. ইলিয়াস আতহারী এক যৌথ বিবৃতিতে ভিকারুননিসার হিজাববিরোধী শিক্ষিকাকে অবিলম্বে বহিষ্কার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

একই দাবি জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহিলা ইউনিটের সভানেত্রী নুরুল সাবিহা, সহ-সভানেত্রী কোহিনুর বেগম, সহ-সভানেত্রী জাকেরা রহমান ও সমন্বয়কারী হাফেজা বুশরা। অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, শুধু ভিকারুননিসা নয়, অনেক স্কুলে হিজাব নিয়ে বিতর্ক হয়। ড্রেস কোড থাকা ভালো, তবে শালীন পোশাক পরায় কোনো বাধা দেওয়া যাবে না।

এমআইএইচ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button