বুদ্ধি বাড়ানোর উপায়

যেভাবে বাড়াতে পারেন মগজের শক্তি

সমাজের সকল মানুষ বুদ্ধিমান ও স্বাস্থ্যবানকে পছন্দ করে। নিজেকে স্বাস্থ্যবান রাখতে অনেকে নিয়মিত ডাক্তারের দারস্থ হন। অনেকে বাসায় নিয়মিত সুষমখাদ্য ও ব্যায়াম করে থাকেন। তবে, আপনি জানলে অবাক হবেন যে- ব্যায়াম করলে যেমন শরীর ও স্বাস্থ্যের পরিবর্তন হয় তেমনি কিছু কাজের মাধ্যমে কোন ব্যক্তি চাইলে তার বুদ্ধিকেও পরিবর্তন করতে পারেন। তাহলে কি মস্তিষ্কের আকারও পরিবর্তন করা সম্ভব? জ্বি। শুনতে অবাক লাগলেও সম্প্রতি এক গবেষণায় এতথ্য দেখা গেছে।

বিজ্ঞানভিত্তিক ওয়েবসাইট স্মার্ট মাইন্ড এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষের মস্তিষ্ক নতুন নতুন নিউরন সৃষ্টি করতে পারে। আর মানুষের স্মৃতিশক্তি এই নিউরনই ধারণ করে থাকে।

গবেষণায় দেখা গেছে, কোন মানুষ যদি তার বুদ্ধি বাড়াতে চান এবং তিনি যদি প্রতিনিয়ত নিজের মস্তিষ্কের সঠিকভাবে পরিচর্যা করেন তাহলে তার বুদ্ধিমত্তা বাড়তে পারে। তাই, অনেক মানুষ নিজের বুদ্ধি বাড়ানোর জন্য বেশি বেশি বই পড়ে থাকেন।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে- নিজের শরীরের গঠন পরিবর্তন করতে অনেকে পুশ আপ, চিন আপ ইত্যাদি ব্যায়াম করে থাকে তাহলে কি মস্তিষ্কের আকার বাড়ানোর জন্যও একই ব্যায়াম করতে হবে?

না, বুদ্ধি বাড়ানোর জন্য এ ধরনের ব্যায়াম বা কঠিন কোন ব্যায়ামের দরকার নেই। শুধু কয়েকটি কাজের মাধ্যমে কোন মানুষ তার মস্তিষ্ককে প্রশিক্ষণ দিয়ে বুদ্ধি বাড়াতে পারেন। তাহলে চলুন  জেনে নেওয়া যাক কীভাবে বুদ্ধি বাড়াবেন….

বুদ্ধি বাড়ানোর নিয়ম

রোজা রাখুন

সারাদিন অনাহারে থেকে রোজা রাখলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। শুধু ধর্মীয় কারণে রোজা নয়, নির্দিষ্ট সময় পর পর রোজা রাখার জন্য বিজ্ঞানারীও বলেছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, রোজা মানব শরীরের অতিরিক্ত দূষণ নষ্ট করে দেয়। এর ফলে মানব শরীর সুস্থ থাকে। রোজা রাখার সময় নিজেকে সতেজ রাখতে পানি খেতে পারেন। কারণ, পানি মানবদেহকে সতেজ এবং দেহকে পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে।

এছাড়া, পানি মানব শরীরের মস্তিষ্ককের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করে। এ ছাড়া কোন মানুষ রোজ রাখলে তার মস্তিষ্কে নতুন নিউরন সৃষ্টি হতে থাকে।

 

ভ্রমণ করুন

শরীরের স্বাস্থ্য ও মস্তিষ্ক ঠিক রাখার জন্য ভ্রমণ খুবই উপকারী। কোথাও ঘুরতে গেলে একদিকে যেমন নতুন পরিবেশের সাথে পরিচয় হয়, নতুন নতুন বিভিন্ন বিষয় জানা যায় অন্যদিকে জ্ঞানও বাড়ে। সেজন্য আপনি চাইলে কোন জায়গা থেকে ঘুরে আসতে পারেন যেখানে এর আগে কখনো আপনি যাননি। নতুন জায়গায় ভ্রমন করলে আপনি নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে ও শিখতে পারবেন। ভ্রমণ মানব মস্তিষ্কে নতুন নিউরন তৈরির প্রক্রিয়াকে আরও বেশি ত্বরান্বিত করে বলে এক গবেষণায় দেখা গেছে।

ভ্রমণ মানুষের জ্ঞান বাড়ায় উল্লেখ করে ক্লিনিক্যাল নিউরোসাইকোলজিস্ট (যুক্তরাষ্ট্র) এবং পিটসবার্গ স্কুল অব মেডিসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজিক্যাল সার্জারির সহযোগী অধ্যাপক ড. পল নুসবাউম বলেন, ‘মানুষ নতুন এবং চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে নিজের মস্তিষ্ককে উন্মুক্ত করার কারণে মানুষের মস্তিষ্কে ডেনড্রাইট জন্মায়। এজন্য আপনাকে তেমন কিছু করতে হবেনা। শুধু ভ্রমন করলেই হবে। ’

 

ভালো ঘুম

ঘুম শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। তাই শরীর সুস্থ রাখতে ঠিকমতো ঘুমাতে হবে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। মস্তিস্কের সক্রিয়তা এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ঘুমের বিকল্প কিছু নেই। তাই, বেশি রাত করে ঘমাতে যাবেন না এবং ভোরে ঘুম থেকে উঠবেন কারণ ভোরের বাতাস শরীরের জন্য খুবই উপকারী।

 

যথাসম্ভব চিনি খাওয়া ছাড়ুন

মানুষ যেসব খাবার গ্রহন করে তা মানুষের শরীরের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। এসব খাবারের মধ্যে কোন খাবার শরীরের জন্য উপকারী কোনটা আবার অপকারী। তবে, চিনিযুক্ত খাবার শরীরের জন্য খুব বেশি উপকারী নয়। এটি মানুষের মেজাজকে প্রভাবিত এবং বিষণ্ণ করে তুলতে পারে।

এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ডেভিড গেফেন স্কুল অব মেডিসিনের নিউরোসার্জারির অধ্যাপক ড. ফার্নান্দো গোমেজ পিনিলা জানান, ফ্রুক্টোজযুক্ত খাবার মানুষের মস্তিষ্কের স্মরণশক্তি কমিয়ে দেয়। তাই, চিনিযুক্ত খাবার পরিহারের জন্য চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ’

আপনি যেমন প্রতিদিন আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে যত্ম নিন তেমনি মস্তিষ্কেরও যত্ন নেওয়া উচিত। চিনিযুক্ত খাবার পরিহার করে পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাবার খান। তা আপনার মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে এবং কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
এ ছাড়া অতিমাত্রায় চিনি খেলে মানুষের চিন্তাশক্তি কমতে থাকে। তাই জাঙ্ক ফুড খাওয়া থেকেও বিরত থাকুন।

 

কিছু সময় একা থাকার চেষ্টা করুন

সবাই মিলে কোন কাজ করলে যেমন ক্ষমতা এবং মনোবল বাড়ে তেমনি জীবনের প্রয়োজনে কখনও কখনও একা থাকাটাও গুরুত্বপূর্ণ। কিছুটা সময় একা থাকলে যেমন আপনি শান্ত হতে পারবেন, তেমনি আপনার মস্তিষ্ক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভাবতে পারবে।

মনে করুন, আপনার অনেক বড় একটি কাজ আসছে যা নিয়ে আপনি খুব চিন্তিত। কিছুটা সময় একা থাকলে যেমন আপনি শান্ত হতে পারবেন, তেমনি আপনার মস্তিষ্ক আপনার কাজ নিয়ে ভাবতে পারবে। পরবর্তী সময়ে আপনি সেই কাজ নিয়ে দলগত আলোচনার সময়ে সবার চেয়ে ভালো আইডিয়া দিতে পারবেন।

কোনো বিষয়ে কারো সাথে কথা বলার আগে নিজেকে সময় দিন। নিজের সঙ্গে আলোচনা করুন। নিজেকে স্থির করে ভাবুন। তাহলে আপনি যে কোন কাজে ভালো ফলাফল পাবেন।

 

হাঁটাচলায় বাড়ে স্মৃতিশক্তি

হাঁটাচলার মাধ্যমে মানুষের স্মৃতিশক্তি বাড়ে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, কোন ব্যক্তি কোনো শব্দ বা বাক্য হেঁটে হেঁটে মুখস্থ করার চেষ্টা করলে তা বহুদিন মনে থাকে।

 

সুরের মাঝে শক্তি

সুরের মাধ্যমে মানুষের স্মৃতিশক্তি বাড়ে। কোন গান মানুষের মস্তিষ্ককে উত্তেজিত করে তুতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, কোন ব্যক্তি গান শোনার সময় তার পুরো মস্তিষ্ক সুরের প্রভাবে সক্রিয় হয়ে উঠে। মস্তিষ্ক গানের স্মৃতি অনেকদিন রাখতে পারে। এটা ডিমেনশিয়ার মত মানসিক অবস্থা ঠেকাতে বেশ কার্যকরী।

নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলুন

ব্যায়াম করলে মানুষের শরীর-স্বাস্থ্য উভয়ই ভালো থাকে। ব্যায়াম করলে শারীরিক যেমন উপকারিতা পাবেন তেমনি মানসিক প্রশান্তিও পাবেন। তাই প্রতিটি মানুষের উচিত নিয়মিত ব্যায়াম করা। নিয়মিত ব্যায়াম করলে মানুষের শরীরে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। এরফলে মস্তিষ্কেও পুষ্টি পৌঁছায়।

#####

বি.দ্র: পরিশেষে আমরা জানতে পারলাম বুদ্ধি বাড়ানোর কৌশল বা বুদ্ধি বাড়ানোর ‍টিপস সম্পর্কে। আশা করি আমাদের এ পোস্টটি আপনার ব্যক্তি জীবনে কাজে লাগবে। যদি এ পোস্টটি আপনাদের ভালো লাগে তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button