ডেটা ট্রান্সমিশন মেথড কি বা কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?

ডেটা স্থানান্তর পদ্ধতি কি বা কাকে বলে?

ডেটা ট্রান্সমিশন মেথড বা ডেটা স্থানান্তর পদ্ধতি কি বা কাকে বলে?

এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে ডেটা ট্রান্সমিশন হওয়ার সময় অবশ্যই দুই কম্পিউটারের মধ্যে এমন একটি সমঝোতা থাকা দরকার যাতে সিগন্যাল বিটের শুরু ও শেষ বুঝতে পারে। বিটের শুরু ও শেষ বুঝতে না পারলে গ্রহীতা কম্পিউটার সেই সিগন্যাল থেকে ডেটা পুনরুদ্ধার করতে পারে না। এই সিগন্যাল পাঠানোর সময় বিটের মধ্যে সমন্বয়ের জন্য ব্যবহৃত পদ্ধতিকে বলা হয় বিট সিনক্রোনাইজেশন।

ডেটা ট্রান্সমিশন মেথড কত প্রকার ও কী কী?

সিনক্রোনাইজেশনের উপর ভিত্তি করে ডেটা ট্রান্সমিশন পদ্ধতিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:

১) এসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশন (Asynchronous Transmission)।
২) সিনক্রোনাস ট্রান্সমিশন (Synchronous Transmission) ।
৩) আইসোক্রোনাস ট্রান্সমিশন (Isochronous Transmission)।

আরও পড়ুন:

মোবাইল ফোন কি? মোবাইল ফোনের জনক, বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা

কম্পিউটার কাকে বলে? কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য, প্রকারভেদ ও ব্যবহার

এসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশন কি বা কাকে বলে? (What is Asynchronous Transmission?)

যে ডেটা ট্রান্সমিশন সিস্টেমে প্রেরক হতে ডেটা গ্রাহকের কাছে ক্যারেক্টার বাই ক্যারেক্টার ট্রান্সমিট হয় তাকে এসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশন বলে। এই ডেটা ট্রান্সমিশনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো –

  •  প্রেরক যে কোন সময় ডেটা ট্রান্সমিট করতে পারবে এবং গ্রাহকও তা গ্রহণ করবে।
  • একটি ক্যারেক্টার ট্রান্সমিট হবার পর আরেকটি ক্যারেক্টার ট্রান্সমিট করার মাঝখানের বিরতি সবসময় সমান না হয়ে ভিন্ন ভিন্নও হতে পারে।
  • প্রতিটি ক্যারেক্টারের শুরুতে একটি স্টার্ট বিট এবং শেষে একটি অথবা দু’টি স্টপ বিট ট্রান্সমিট করা হয়।

 

স্টার্ট বিট + ৮ বিট ক্যারেক্টার + স্টপ বিট

চিত্র : এসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশন

এ ধরনের ডেটা ট্রান্সমিশনকে স্টার্ট/স্টপ ট্রান্সমিশনও বলা হয়। সাধারণত যখন কোন CPU এর সাথে এক বা একাধিক টার্মিনাল (কী-বোর্ড অথবা কী-বোর্ড ও মনিটর) সংযুক্ত করা হয় তখন Terminal থেকে CPU পর্যন্ত এ ধরনের অর্থাৎ এসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। কেননা যখন একজন অপারেটর কী-বোর্ড হতে ডেটা টাইপ করবে তখন প্রতি অক্ষর চাপার সাথে সাথে কী-বোর্ড হতে CPU তে ডেটা স্থানান্তর হবে এবং কখনোই একজন অপারেটরের টাইপিং এর গতি একইভাবে পাওয়া যাবে না। ফলে ক্যারেক্টার টু ক্যারেক্টার টাইম ইন্টারভেল অসমান বা অনিয়ম হবে।

আরও পড়ুন:

ইউনিকোড কি? ইউনিকোড প্রতিষ্টার কারন এবং সুবিধা সমূহ

ভিডিও কনফারেন্সিং কি? ভিডিও কনফারেন্সিং এর সুবিধা

এই এসিনক্রোনাস ডেটা ট্রান্সমিশন সিস্টেমে কী-বোর্ডের প্রতি অক্ষর চাপার সাথে সাথে ৭ বিটের একটি ক্যারেক্টার ডেটা উৎপন্ন হয়। এই ৭ বিটের সাথে একটি Parity bit যোগ হয়ে ডেটাটি এক বাইট বা ৮ বিট এ রূপান্তরিত হয়। এই ৮ বিটের ক্যারেক্টার ডেটাকে ট্রান্সমিশনের পূর্বে তার সম্মুখে একটি স্টার্ট বিট এবং শেষেএকটি বা দুটি Stop বিট সংযুক্ত করা হয়। ফলে প্রতিটি ক্যারেক্টারের ডেটা ১০ অথবা ১১ বিটের ডেটায় রূপান্তরিত হয়ে ট্রান্সমিট হয়।

 

এসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশনের সুবিধা (Advantages of asynchronous transmission)

  • প্রেরক যে কোন সময় ডেটা স্থানান্তর করতে পারেন এবং গ্রাহক তা গ্রহণ করতে পারেন ।
  • ডেটা ট্রান্সমিশনের জন্য প্রেরকের কোন প্রাইমারি স্টোরেজ ডিভাইসের প্রয়োজন হয় না।
  • এটির ইন্সটলেশন ব্যয় অত্যন্ত কম। ৪। অল্প করে ডেটার ট্রান্সমিশন প্রয়োজন এমন পরিবেশে, যেমন ইন্টারনেটে এই পদ্ধতি বেশি উপযোগী।

আরও পড়ুন:

ইন্টারনেট কাকে বলে? ইন্টারনেট কত প্রকার? সুবিধা ও অসুবিধা

কৃত্রিম উপগ্রহ কি বা কাকে বলে? কৃত্রিম উপগ্রহের প্রকারভেদ ও ব্যবহার

এসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশনের অসুবিধা (Disadvantages of asynchronous transmission)

  • যখন ডেটা স্থানান্তরের কাজ বন্ধ থাকে তখন ট্রান্সমিশন মাধ্যমটি অকারণে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকে যা
  • মাইক্রোওয়েভ বা স্যাটেলাইট মাধ্যমের ক্ষেত্রে অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
  • সিনক্রোনাস ট্রান্সমিশনের তুলনায় এর দক্ষতা কম।
  • ডেটা ট্রান্সমিশনে গতি অপেক্ষাকৃত মন্থর।

 

এসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশন এর ব্যবহার (Use of asynchronous transmission)

কোন কম্পিউটার হতে প্রিন্টারে, পাঞ্চ কার্ড রিডার হতে কম্পিউটারে, কম্পিউটার হতে কার্ড পাঞ্চারে কিংবা কী-বোর্ড হতে কম্পিউটারে ডেটা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে এসিনক্রোনাস ডেটা স্থানান্তর বা ট্রান্সমিশন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

 

সিনক্রোনাস ট্রান্সমিশন কি বা কাকে বলে? (What is Synchronous Transmission?)

এ প্রকার ডেটা ট্রান্সমিশন ব্যবস্থায় প্রেরক স্টেশনে প্রথমে ডেটাকে কোন প্রাথমিক স্টোরেজ ডিভাইসে সংরক্ষণ করে নেয়া হয়। অতঃপর ডেটার ক্যারেক্টারসমূহকে ব্লক (যাকে প্যাকেটও বলা হয়) আকারে ভাগ করে প্রতিবারে একটি করে ব্লক ট্রান্সমিট করা হয়। প্রতিটি ব্লকে কমপক্ষে ৮০ থেকে ১৩২টি ক্যারেক্টার থাকে। প্রতি দু’টি ব্লকের মাঝখানের সময় বিরতি নির্ধারিত সময়ে হয়ে থাকে এবং প্রতিটি ব্লক ডেটার শুরুতে একটি হেডার ইনফরমেশন ও শেষে একটি ট্রেইলর ইনফরমেশন সিগন্যাল পাঠানো হয়। এই হেডার সিগন্যাল রিসিভারের ব্লক গতিকে প্রেরকের ক্লক গতির সাথে সিনক্রোনাইজ করে এবং প্রেরক ও গ্রাহকের চিহ্নিতকরণের সংখ্যা বহন করে থাকে। আর ট্রেইলর ব্লকের শেষ বুঝানোর তথ্য বহন করে। তাছাড়া ডেটার মধ্যে কোন ভুল আছে কিনা তা যাচাই করতে সহায়তা করে থাকে।

আরও পড়ুন:

ইনফ্রারেড কি ? ইনফ্রারেড কত প্রকার? সুবিধা ও অসুবিধা

ডেটা ট্রান্সমিশন স্পীড কি? কত প্রকার ও কি কি?

সিনক্রোনাস ট্রান্সমিশনের সুবিধা (Advantages of synchronous transmission)

  • সিনক্রোনাস ট্রান্সমিশনের দক্ষতা (Efficiency) এসিনক্রোনাস এর তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশি।
  • অবিরাম ট্রান্সমিশন কাজ চলতে থাকার ফলে তার ট্রান্সমিশন গতি অপেক্ষাকৃত বেশি।
  • প্রতি ক্যারেক্টারের পর টাইম ইন্টারভেল এর প্রয়োজন হয় না এবং প্রতি ক্যারেক্টারের শুরু ও শেষে Start এবং Stop bit এর প্রয়োজন হয় না।
  • সময় তুলনামূলকভাবে কম লাগে।

 

সিনক্রোনাস ডেটা ট্রান্সমিশনের অসুবিধা (Disadvantages of synchronous data transmission)

  • প্রেরক স্টেশনে প্রেরকের সাথে একটি প্রাথমিক সংরক্ষণের ডিভাইসের প্রয়োজন হয়।
  • এটি তুলনামূলকভাবে ব্যয় বহুল।

আরও পড়ুন:

গুগলে দ্রুত সঠিক তথ্য খুঁজে পাওয়ার কৌশল

ব্লুটুথ কি বা কাকে বলে? ব্লুটুথের বৈশিষ্ট্য, ব্যবহার, সুবিধা ও অসুবিধা

সিনক্রোনাস ট্রান্সমিশন এর ব্যবহার (Use of synchronous transmission)

কম্পিউটার থেকে কম্পিউটারে ডেটা কমিউনিকেশনের সময়, এক স্থান হতে দূরবর্তী কোন স্থানে ডেটা স্থানান্তরে অথবা একই সাথে অনেকগুলো কম্পিউটারে ডেটা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে সিনক্রোনাস ডেটা ট্রান্সমিশন পদ্ধতি বহুল ব্যবহৃত হয়।

 

সিনক্রোনাস এসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশন সিস্টেমের মধ্যে পার্থক্য

এসিনক্রোনাস সিনক্রোনাস
১। যে ডেটা ট্রান্সমিশন সিস্টেমে প্রেরক হতে ডেটা গ্রাহকে ক্যারেক্টার বাই ক্যারেক্টার ডেটা ট্রান্সমিট হয় তাকে এসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশন বলে। ১। যে ডেটা ট্রান্সমিশন ব্যবস্থায় প্রেরক স্টেশনে ডেটার ক্যারেক্টার সমূহকে ব্লক (যাকে প্যাকেট ও বলা হয়) আকারে ভাগ করে প্রতিবারে একটি করে ব্লক ট্রান্সমিট করা হয়, তাকে সিনক্রোনাস ট্রান্সমিশন বলে।
২। এসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশন ব্যবস্থায় প্রেরক স্টেশনে প্রথমে ডেটাকে কোন প্রাথমিক স্টোরেজ ডিভাইসে সংরক্ষণ করার প্রয়োজন হয় না। ২। সিনক্রোনাস ট্রান্সমিশন ব্যবস্থায় প্রেরক স্টেশনে প্রথমে ডেটাকে কোন প্রাথমিক স্টোরেজ ডিভাইসে সংরক্ষণ করে নেয়া হয়।
৩। এ সিস্টেমে ডেটা ক্যারেক্টার বাই ক্যারেক্টার আকারে ট্রান্সমিট হয়। ৩। এ সিস্টেমে ব্লক বাই ব্লক আকারে ডেটা ট্রান্সমিট

করা হয়।

৪। এখানে ক্যারেক্টার বাই ক্যারেক্টার ট্রান্সমিট করার মাঝের বিরতি সময় সমান হয় না। ৪। প্রতিটি ব্লকের মাঝের বিরতি সমান হয়ে থাকে।
৫। এ ধরনের ট্রান্সমিশনে দক্ষতা কম। ৫। এ ধরনের ট্রান্সমিশনে দক্ষতা বেশ
৬। পুরো ডেটা ট্রান্সমিশন হতে তুলনামূলক সময় বেশি লাগে ৬। এখানে তুলনামূলক সময় কম লাগে ।
৭। এ ট্রান্সমিশন পদ্ধতিতে প্রতিটি ক্যারেক্টারের শুরুতে Start বিট ও শেষে Stop বিটের প্রয়োজন হয়। ৭। এ ট্রান্সমিশন পদ্ধতিতে Start ও Stop বিটের প্রয়োজন হয় না।

আরও পড়ুন:

ই-সিম কী? ই-সিমের সুবিধা ও অসুবিধা এবং ব্যবহারের নিয়ম

মোবাইল অফিশিয়াল না আন অফিশিয়াল বুঝবেন যেভাবে

আইসোক্রোনাস ট্রান্সমিশন কাকে বলে? (What is Isochronous Transmission?)

আইসোক্রোনাস ট্রান্সমিশন প্রায় সিনক্রোনাস ট্রান্সমিশনের মতোই। তবে আরও উন্নত ভার্সন আইসোক্রোনাস ট্রান্সমিশনের ক্ষেত্রে প্রেরক ও প্রাপক স্টেশনের মধ্যে ডেটা ট্রান্সমিশন ডিলে (Delay) সর্বনিম্ন রাখা হয়। এ পদ্ধতিতে প্রেরক হতে গ্রাহককে অনেকগুলো বর্ণ নিয়ে একটি করে ব্লক তৈরি করে একসাথে একটি ব্লক ডেটা পাঠানো হয়। এ পদ্ধতিতে দুটি ব্লকের মধ্যে ডেটা ট্রান্সফারের সময় প্রায় একক করার চেষ্টা করা হয়ে থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button