ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কী বা কাকে বলে?

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কী বা কাকে বলে?

কোন একটি দেশে প্রধান জাতির পাশাপাশি বসবাসরত সংখ্যালঘিষ্ঠ এবং অপেক্ষাকৃত অনগ্রসর জাতি বা সম্প্রদায়কে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বলে। নৃবিজ্ঞানী কোহেন এর মতে,“ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বলতে এমন এক জনগোষ্ঠীকে বোঝায় যারা তাদের জীবিকার জন্য খাদ্য সংগ্রহ, উদ্যান, কৃষি ও পশুপালনের ওপর নির্ভরশীল।”

দক্ষিণ এশিয়ার একটি ছোট দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। তবে, এ দেশটি জনবহুল একটি রাষ্ট্র। এ দেশের ভূখন্ডের জনসংখ্যার অধিকাংশ হলো আদিবাসী বাঙালি। এছাড়া অনেকগুলো ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী রয়েছে যারা নিজেদেরকে আদিবাসী বলেও উল্লেখ করে থাকে। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জনগোষ্ঠির সংখ্যা প্রায় ১৫ লক্ষ ৮৭ হাজার যা মোট জনসংখ্যার প্রায় এক শতাংশের মতো (১.১১%) ।

বিশ্বের অনেক দেশে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী রয়েছে। বাংলাদেশে যেসব ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী রয়েছে তার মধ্যে চাকমা, মারমা, রাখাইন, মনিপুরি, গারো, সাঁওতাল, খাসিয়া প্রভৃতি অন্যতম। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হচ্ছে চাকমা। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সিংহভাগ পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং ময়মনসিংহ, সিলেট ও রাজশাহী অঞ্চলে বসবাস করে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের লক্ষ্যে ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা ও আনুষাঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে ২০১০ সালে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্তাসমূহের সংস্কৃতি অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক পর্যটন বিকাশে ভূমিকা রাখছে ।

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্তাসমূহের ভৌগোলিক অবস্থান পারিবারিক কাঠামো এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যতা বর্ণনা করুন।

দেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশে রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলায় ক্ষুদ্র জাতিসত্তার প্রধান একটি অংশ বাস করে। এসব জেলায় বসবাসকারী জনগোষ্ঠীগুলো হলো— চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, বম, পাংখুয়া, চাক, ম্রো, তঞ্চঙ্গ্যা, খ্যাং, খুমি এবং লুসেই।

রক্ত ও শারীরিক গঠনের বিচারে এসব ক্ষুদ্র ও নৃ-গোষ্ঠী মঙ্গোলীয় জনগোষ্ঠীর লোক। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাংশেও মঙ্গোলীয় জনগোষ্ঠীর লোক বসবাস করে থাকে। তাদের মধ্যে বৃহত্তম ময়মনসিংহ অঞ্চলে গারো, হাজং, কোচ এবং বৃহত্তম সিলেট অঞ্চলে খাসি বা খাসিয়া ও মণিপুরি প্রভৃতি ক্ষুদ্র ও নৃ-গোষ্ঠী বসবাস করে।

বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাংশের দিনাজপুর, রংপুর, রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা প্রভৃতি এলাকায় এবং উত্তর-পূর্বাংশের বৃহত্তম সিলেট অঞ্চলেও নানা ক্ষুদ্র জাতিসত্তার লোক বাস করে। তাদের মধ্যে সাওতাল, ওরাওঁ, মাহালি, মুন্ডা, মাল পাহাড়ি, মালো প্রভৃতি অন্যতম।

 

একনজরে বাংলাদেশের প্রধান ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী

  • বাংলাদেশে উপজাতি বাস করে- ৪৮টি। মোট জনসংখ্যা- ১৫ লাখ ৮৬ হাজার।
  • পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত- চাকমা, মারমাসহ ১১টি উপজাতি বাস করে।
  • উত্তর ও উত্তর পূর্বাংশে- মঙ্গোলীয় উপজাতি।
  • বৃহত্তম ময়মনসিংহ- গারো, হাজং, কোচ।
  • বৃহত্তম সিলেট- খাসিয়া, মনিপুরি। উত্তর ও উত্তর পশ্চিমাংশের- সাওতাল, ওরাওঁ, সাহালী, মুক্তা, মালো, মালাপাহাড়ি।
  • কক্সবাজার, পটুয়াখালি, বরগুনা- রাখাইন। মোট জনসংখ্যার- ১.১০% উপজাতি।

##############

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button