লাহোর প্রস্তাব কি? লাহোর প্রস্তাব কে উত্থাপন করেন? লাহোর প্রস্তাব মূল বক্তব্য কি?
লাহোর প্রস্তাব
লাহোর প্রস্তাব
আজ আমরা লাহোর প্রস্তাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। এ আর্টিকেল থেকে আপনারা জানতে পারবেন- লাহোর প্রস্তাব কি অথবা লাহোর প্রস্তাব কাকে বলে, লাহোর প্রস্তাব কে উত্থাপন করেন, লাহোর প্রস্তাবের বৈশিষ্ট্য ও তাৎপর্য ইত্যাদি।
লাহোর প্রস্তাব কি?
১৯৪০ সালের ‘লাহোর প্রস্তাব’ ও জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ত্ব’ পাকিস্তান আন্দোলনের মূলভিত্তি হিসেবে পরিগণিত হয়। লাহোর প্রস্তাবের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে ভারত বিভক্তির দাবি অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়ে। লাহোর প্রস্তাব উত্থাপনের সাত বছরের ব্যবধানে ভারত বিভক্ত হয়ে দ্বিখন্ড হয়ে যায়।
১৯৩৭ সালের সাধারণ নির্বাচনে মুসলীম লীগের পরাজয় মুসলিম লীগের নেতৃবৃন্দকে শঙ্কিত করে তোলে। এসময় কংগ্রেস জয় লাভ করে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে আইনসভার নেতৃত্ব গ্রহণ করে। এমনকি মুসলিম লীগকে কোন ছাড় না দিয়ে মুসলিম শাসন যুক্ত প্রদেশে (ইউপি) মন্ত্রিসভা গঠন করে। এর ফলে মুসলিম জনসাধারণের মনে ক্ষোভ ও ভীতির সঞ্চার হয়। কোথাও কোথাও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে কংগ্রেসের পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর একদর্শী নীতির কারণে হিন্দু মুসলিম সম্পর্কের দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে।
এ অবস্থায় মুসলিম স্বার্থের উপর গুরুত্ব আরোপ করে মুসলিম লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ‘দ্বিজাতি তত্ত্ব’ প্রচারে উৎসাহী হয়ে উঠেন। তিনি ভারতবর্ষের মুসলমানদের একটি স্বতন্ত্র জাতি হিসাবে ঘোষণা দেন। পরবর্তী সময়ে এর ফলে ভারতের মুসলমানদের মধ্যে আলাদা আবাসভূমির চিন্তা জাগ্রত হয়।
এই চিন্তাধারার আলোকেই ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ পাঞ্জাবের লাহোরে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের বার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনে মুসলিম লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সভাপতিত্বে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এ. কে. ফজলুল হক মুসলমানদের স্বার্থে একটি প্রস্তাব পেশ করেন। যা ঐতিহাসিক ‘লাহোর প্রস্তাব’ বা ‘পাকিস্তান প্রস্তাব’ নামে অভিহিত।
লাহোর প্রস্তাব কে উত্থাপন করেন?
১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ পাঞ্জাবের লাহোরে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের বার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনে বাংলার বাঘ বলে খ্যাত ও তৎকালীন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এ. কে. ফজলুল হক লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন। লাহোর প্রস্তাবের মূল বিষয়বস্তু ছিলো মুসলমানদের অধিকার ও স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা করা।
আরও পড়ুন-
বঙ্গভঙ্গ কি বা কাকে বলে ? কত সালে বঙ্গভঙ্গ হয়?
বঙ্গভঙ্গ রদ কি? বঙ্গভঙ্গ রদ কত সালে হয় ? বঙ্গভঙ্গ রদ করেন কে?
লাহোর প্রস্তাবের মূল বক্তব্য বা লাহোর প্রস্তাবের মূল বৈশিষ্ট্য-
- ভৌগোলিক অবস্থান থেকে সন্নিহিত এলাকাগুলোকে পৃথক অঞ্চল বলে গণ্য করতে হবে।
- এ অঞ্চলগুলোর ভৌগোলিক সীমানা প্রয়োজনমত পরিবর্তন করে ভারতবর্ষের উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বভাগের যে সকল স্থানে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ সেসকল স্থানে স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ গঠন করতে হবে।
- এসব স্বাধীন রাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলো হবে স্বায়ত্তশাসিত ও সার্বভৌম।
- নবগঠিত মুসলিম রাষ্ট্রের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক, শাসনতান্ত্রিক ও অন্যান্য স্বার্থ ও অধিকার সংরক্ষণের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
- দেশের যে কোনো ভবিষ্যৎ শাসনতান্ত্রিক পরিকল্পনায় এই বিষয়গুলোকে মৌলিক নীতি হিসাবে গ্রহণ করতে হবে।
লাহাের প্রস্তাব কি পাকিস্তান প্রস্তাব ছিল?
লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তি ছিল দ্বিজাতি তত্ত্ব। এর ফলে ভারতের মুসলমানদের মধ্যে এক অদম্য চেতনা জাগ্রত হয়। তবে, লাহোর প্রস্তাবের মধ্যে কোথাও ‘পাকিস্তান’ কথাটি ছিলো। যদিও পরবর্তী সময়ে এ প্রস্তাব পাকিস্তান প্রস্তাব নামে পরিচিতি লাভ করে।
লাহোর প্রস্তাবের ফলাফল ও পরবর্তী প্রতিক্রিয়া
ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের মধ্যে লাহোর প্রস্তাব এক নতুন প্রেরণার সৃষ্টি করে। লাহোর প্রস্তাব মুসলিম লীগকে একটি সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক কর্মসূচি ও দিকনির্দেশনা হিসাবে কাজ করে।
মুসলমানরা তাদের অধিকার আদায়ে সচেতন হতে থাকে। এরফলে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের রাজনীতি পৃথক পৃথক রাষ্ট্র গঠনের আন্দোলনে পরিণত হতে থাকে। মুসলমানদের পৃথক রাষ্ট্র গঠনের দাবিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায় অস্বীকার করে। এরফলে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার হয়। ধীরে ধীরে এ আন্দোল বেগবান হতে থাকে । এক পর্যায়ে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ভারত বিভক্ত হয়ে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হয়। ###
আমাদের পিডিএফ বই কালেকশান গুলো পেতে |
2 Comments