বঙ্গভঙ্গ রদ কি? বঙ্গভঙ্গ রদ কত সালে হয় ?
বঙ্গভঙ্গ রদ কি? বঙ্গভঙ্গ রদ কত সালে হয় এবং এটি কে করেন?
বঙ্গভঙ্গ
আজকে আমরা আলোচনা করবো বঙ্গভঙ্গ কি, বঙ্গভঙ্গ রদ নিয়ে। আপনি এ পোস্ট থেকে জানতে পারবেন বঙ্গভঙ্গ রদ কি? বঙ্গভঙ্গ রদ কত সালে হয়? বঙ্গভঙ্গ রদ করেন কে ইত্যাদি।
বঙ্গভঙ্গ কি?
বঙ্গভঙ্গ শব্দটি একটু লক্ষ্য করলেই বঙ্গভঙ্গ কি খুব সহজেই বুঝা যাবে। বঙ্গভঙ্গ শব্দটিতে দুটি শব্দ রয়েছে। একটি বঙ্গ যার অর্থ দাড়ায় বাংলা, আরেকটি ভঙ্গ যার অর্থ দাড়ায় ভাগ। সুতরাং, বঙ্গভঙ্গ হলো বাংলার ভাগ।
১৯০৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ শাসক বঙ্গভঙ্গের ঘোষণা দেন। এসময় বঙ্গ প্রদেশকে লর্ড কার্জন বিভক্ত করে নতুন প্রদেশ সৃষ্টি করেন। যা ওই বছরের ১৫ অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়।
বঙ্গবঙ্গের ফলে দুটি প্রদশের সৃষ্টি হয়। একটি পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশ। আরেকটি পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ। ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও আসামকে নিয়ে পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশ এবং পশ্চিম বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ গঠিত হয়। পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের রাজধানী ঢাকা এবং পশ্চিম প্রদেশের রাজধানী হয় কলকাতা। শাসনকার্য পরিচালনার সুবিধার্থে বঙ্গবঙ্গ করা হয়। তবে, এটি ইতিহাসে ভারতীয় উপমহাদেশের জাতীয়তাবাদ ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
বঙ্গভঙ্গের কারণ?
অনেকগুলো কারণে বঙ্গভঙ্গ হয়। তার মধ্যে, কিছু উল্লেখ্যযোগ্য কারণ ছিলো। যথা-
- শাসনতান্ত্রিক কারণ।
- রাজনৈতিক কারণ।
- ভাগ কর শাসন কর নীতি।
- সামাজিক কারণ।
- অর্থনৈতিক কারণ।
বঙ্গভঙ্গ কি? এবং বঙ্গভঙ্গের কারণ? আমাদের আজকের আলোচনা বিষয়বস্তু নয় । বঙ্গভঙ্গ কি? এবং বঙ্গভঙ্গের কারণ? নিয়ে আমাদের একটি বিস্তাতি পোস্ট রয়েছে। আমি এখানে ক্লিক করে পোস্টটি পড়ে আসতে পারেন। আমাদের আজকের আলোচনা বঙ্গভঙ্গ রদ কি? বঙ্গভঙ্গ রদ কত সালে হয় ? বঙ্গভঙ্গ রদ করেন কে ইত্যাদি।
বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলন
লর্ড কার্জন পুরো অঞ্চলকে দুটিভাগে ভাগ করে ঢাকাকে নতুন প্রদেশের প্রশাসনিক কেন্দ্র ঘোষণা করেন। এ প্রদেশের গভর্নর নিযুক্ত হন স্যার বাম্পফিল্ড ফুলার। বঙ্গবঙে্গর ফলে পূর্ব বাংলার জনগন সার্বিকভাবে উপকৃত হতে থাকে। ঙ্গভঙ্গকে পূর্ববাংলার জনগন আশীর্বাদ বলে স্বাগত জানায়। কিন্তু বাংলার হিন্দু সম্প্রদায় বিশেষ করে বর্ণ হিন্দুগণ বঙ্গভঙ্গের ঘোর বিরোধী ছিলেন। তারা বঙ্গবঙ্গকে মেনে নিতে পারেনি। এরফলে তারা বঙ্গবঙ্গের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করতে থাকে।
হিন্দু সম্প্রদায় বঙ্গভঙ্গ বিরোধিতার কারণ ছিল দুইটি। যথা-
১) বঙ্গভঙ্গ হিন্দু কায়েমি স্বার্থের মূলে কুঠারাঘাত হানে। কেননা, তৎকালীন সময়ে বাংলার রাজনীতি, অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, চাকরি ইত্যাদি কলকাতাকেন্দ্রিক ছিলো। এর মূল নিয়ন্ত্রণে ছিলো হিন্দু সম্প্রদায়। বঙ্গবঙ্গের ফলে তাদের স্বার্থের চরম হানি ঘটে।
২) দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী হিন্দু নেতৃবৃন্দের কাছে বাংলার বিভক্তি ছিল ‘মাতৃভূমির অঙ্গচ্ছেদ’ এর সমান। তারা বাংলার বাঙালির ভাষা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন যে, বাংলা অবিচ্ছেদ্য। বঙ্গভঙ্গকে ব্রিটিশ ষড়যন্ত্র বলে তারা আখ্যায়িত করে। হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা বঙ্গবঙ্গের উদ্দেশ্য বলে তারা প্রচার করতে থাকে। এসময় দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজে রাখি বন্ধনে শামিল হয়েছিলেন।
আরও পড়ুন-
বঙ্গভঙ্গ কি বা কাকে বলে ? কত সালে বঙ্গভঙ্গ হয়?
লাহোর প্রস্তাব কি? লাহোর প্রস্তাব কে উত্থাপন করেন? লাহোর প্রস্তাব মূল বক্তব্য কি?
একই চেতনায় আবার শিক্ষিত মুসলমানদের মধ্যে কেউ কেউ বঙ্গভঙ্গের বিরোধী ছিলেন। এসব কারণে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে বাংলার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি সর্বাত্মক আন্দোলনের রূপ নেয়। চলতে থাকে বাংলার সর্বত্র জায়গায় বঙ্গভঙ্গ বিরোধী জন সমাবেশ, প্রতিবাদ সভা। আন্দোলন তীব্র হলে ব্রিটিশ সরকার নত হতে বাধ্য হয়। এক পর্যায়ে ১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর বঙ্গভঙ্গ রদ ঘোষণা করা হয়।
বঙ্গভঙ্গ রদ কত সালে হয় ?
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের মধ্যে ১৯০৬ সালের ১৫ জুলাই পূর্ব বাংলা ও আসাম প্রদেশের লেফটেন্যান্ট গভর্নর ফুলার পদত্যাগ করেন। যিনি পূর্ব বাংলা ও আসাম প্রদেশের মুসলমানদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছিলো। তাঁর হঠাৎ পদত্যাগ তাদেরকে হতাশ করে। অন্যদিকে, বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন চলতে থাকে। এক পর্যায়ে ১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর সম্রাট পঞ্চম জর্জ দিল্লির দরবারে বঙ্গভঙ্গ রদ ঘোষণা করেন। একই সাথে তিনি ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরের কথা বলেন।
বঙ্গভঙ্গ রদের ফলাফল
বঙ্গভঙ্গ রদ ছিলো হিন্দু স্বার্থান্বেষী মহলের আধিপত্য বিস্তারের হাতিয়ার। দুই বাংলাকে পুনরায় একত্রিত করা ছিলো তাদের আন্দোলনের বিজয়। অপরদিকে, মুসলমান সম্প্রদায় এতে ক্ষুব্ধ হয়। কারণ, এর আগে ব্রিটিশ সরকার ঘোষণা করেছিল বঙ্গভঙ্গ একটি স্থায়ী ব্যবস্থা যা কারো চাপের মুখে রদবদল করা হবে না। মুসলমান সম্প্রদায় বঙ্গভঙ্গ রদকে ব্রিটিশ সরকারের ঘোষণার বরখেলাপ মনে করে। এটি তাদের কাছে অপমানজনক বলে মনে হয়। কারণ এ ব্যাপারে ব্রিটিশ সরকার মুসলমান সম্প্রদায়ের সাথে কোন আলোচনার প্রয়োজন অনুভব করে নি। হিন্দুদের সংগঠিত শক্তি আর দাপটের কাছে ব্রিটিশ সরকার মাথানত করেছে এ ধারণা মুসলমানদের মধ্যে দৃঢ়মূল হয়। বঙ্গভঙ্গ রদের ফলে ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে সম্প্রতি নষ্ট হয়। সাম্প্রদায়িকতা ও স্বাতন্ত্র্যবোধ প্রসার লাভ করে। ধর্মকেন্দ্রিক জাতীয়তার বীজ অঙ্কুরিত হয়।
3 Comments