নার্সিং পড়ার যোগ্যতা | কোথায় পড়বেন | মাসে বেতন কত

নার্সিং পেশা কী?

চিকিৎসা জগতে নার্সিং একটি মহৎ পেশার নাম। হাসপাতাল, ক্লিনিকসহ যেখানে রোগীর চিকিৎসা করা হয় সেখানেই নার্সদের দেখা মিলে। একজন নার্স সাধারণত ডাক্তারদের পাশে থেকে তাদের বিভিন্নভাবে সাযায্য সহযোগিতা করে থাকেন। বিশেষ করে একজন চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে অসুস্থ রোগির সেবা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পরিচর্যার কাজ করে থাকেন।

সারাদেশে জনসংখ্যা বেড়েই চলছে। সে কারণে বাড়ছে হাসপাতাল। যার ফলে এ পেশার কর্মক্ষেত্র দিন দিন বড় হচ্ছে। আগ্রহী হয়ে উঠেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরাও।

এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর অধিকংশ শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে থাকে। এসময় অধিকাংশ মেয়ের স্বপ্ন থাকে নার্সিং এ ভর্তি হওয়ার। কিন্তু নানা সিমাবদ্ধতার কারণে শেষ পর্যন্ত নার্সিং এ পড়া হয়না। সেজন্য প্রয়োজন হয় সঠিক গাইডলাইন ও পূর্ণাঙ্গ ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি।

আজকের এ পোষ্টে আমরা আলোচনা করবো- কীভাবে নার্সিং এ ভর্তি হওয়া যায়, নার্সিং ভর্তি প্রস্তুতি, নার্সিং পড়ার যোগ্যতা, কোথায় নার্সিং পড়বেন, একজন নার্সের মাসিক আয়সহ নার্সিং পেশার বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা। তাহলে চলুন, শুরু করা যাক….

 

আরও পড়ুন:

পড়া মনে রাখার সহজ কৌশল

নার্সিংয়ে পড়ার যোগ্যতা

নার্সিং এ পড়াশোনার জন্য দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। চার বছর মেয়াদী বিএসসি ইন নার্সিং কোর্সটি করতে চাইলে অবশ্যই বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হতে হবে। এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। প্রার্থীকে এসএসসি বা সমমান এবং এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় দেশের যেকোনো শিক্ষাবোর্ড হতে মোট জিপিএ ৭.০০ সর্বনিম্ন এবং পৃথকভাবে জীববিজ্ঞান বিষয়ে ৩.০০ পয়েন্ট থাকতে হয়।

অন্যদিকে তিন বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কোর্সটি করতে এসএসসি বা সমমান এবং এইচএসসি বা সমমান সনদ দরকার হয়। এক্ষেত্রে প্রার্থী যে কোন বিভাগের হলেই কোর্সটি সম্পন্ন করতে পারবে। তবে, প্রার্থীকে এসএসসি বা সমমান এবং এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় দেশের যেকোনো শিক্ষাবোর্ড হতে মোট জিপিএ ৬.০০ সর্বনিম্ন থাকতে হবে।

দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণত নার্স নিয়োগ করে বাংলাদেশ সরকারের সেবা পরিদপ্তর। তাই নার্সিং পেশায় নিয়োগ পেতে চাইলে প্রার্থীকে বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল অনুমোদিত দেশের যেকোন সরকারি-বেসরকারি নার্সিং কলেজ অথবা নার্সিং ইন্সটিটিউট থেকে Diploma in Nursing বা BSc in Nursing কোর্স সম্পন্ন করতে হবে। Diploma in Nursing বা BSc in Nursing কোর্স সম্পন্ন করার পর একজন প্রার্থী দেশের সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে নার্সিং পদের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

 

কোথায় পড়বেন নার্সিং?

নার্সিং পড়ার জন্য দেশে অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তার মধ্যে, ৭ টি সরকারি ও ২১ টি বেসরকারি নার্সিং কলেজ রয়েছে। যেখানে এইচএসসি পাশের পর একজন শিক্ষার্থীকে নার্সিং এ দক্ষ করে তোলা হয়।

এছাড়া, দেশে ৪৩টি সরকারি এবং ৭০টি বেসরকারি নার্সিং ইনিস্টিটিউট রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ৩ বছর মেয়াদী Diploma in Nursing Science and Midwifery ও Diploma in Midwifery কোর্স রয়েছে। এছাড়াও এসব প্রতিষ্ঠানে ৪ বছর মেয়াদী Bachelor of Science in Nursing কোর্স রয়েছে। আপনি চাইলে এখানে কোর্স করতে পারবেন।

তবে দেশের কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও নার্সিং এ ডিপ্লোমা কোর্স করানো হয়। এছাড়া সাইকিয়াট্রিক, সিসিইউ, আইসিইউ, পেডিয়াট্রিক, অর্থোপেডিকস ও কার্ডিয়াক নার্সিংসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ০১ বছর মেয়াদী কোর্স রয়েছে।

 

আরও পড়ুন:

মানসিক চাপ থেকে মুক্তির উপায়

 

নার্সিংয়ে পড়তে খরচ কেমন?

সাধারণ দুই ধরনের নাসিং কলেজ রয়েছে। কোন শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে সরকারী নার্সিং কলেজে ভর্তির সুযোগ পেলে পড়াশোনা করতে তেমন খরচ হয়না। শুধু ভর্তির সময় নির্ধারিত ফি ও পরীক্ষার ফি দিতে হয়। এছাড়া, সরকারী নার্সিং কলেজে পড়লে শিক্ষার্থীদের প্রতি মাসে বৃত্তি দেওয়া হয়।

তবে বেসরকারি কলেজ এবং ইনস্টিটিউটগুলোতে খরচ প্রতিষ্ঠানভেদে কমবেশি হয়ে থাকে।

 

নার্সিং এ পড়লেই কি নার্সিং পেশায় যুক্ত হওয়া যাবে?

জ্বি না, নার্সিং এ পড়াশোনা করার পর একজন শিক্ষার্থীকে ৬ মাসের ইন্টার্নশিপ সম্পন্ন করতে হয়। তারপর বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল আয়োজিত পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই একজন শিক্ষার্থী নার্সিংকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করতে পারবেন।

 

নার্সদের কাজের ধরন

দেশের প্রতিটি সরকারী-বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকে অসংখ্য নার্স দেখা যায়। যারা সর্বদা রোগিদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।তবে, নার্স মানে কোন ডাক্তার নয়। তিনি একজন ডাক্তারের সহকারী হিসাবে কাজ করেন। তারপরেও নার্সদের হাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থাকে।

একজন নার্স ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী একজন রোগির রোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। এছাড়া, রোগীর রক্তচাপ মাপা এবং শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপসহ সঠিক সময়ে রোগিকে ঔষধ খেতে সাহায্য করেন। এছাড়া, অপারেশনের আগে Operation Theater এর প্রয়োজনীয় সকল সরঞ্জামাদি প্রস্তুতের কাজ একজন নার্স করে থাকেন।

 

আরও পড়ুন:

সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মেনে চলুন ৮টি কথা !

চাকরির সুযোগ কেমন

পড়াশোনা শেষ করে একজন শিক্ষার্থী যে কোন হাসপাতালে নার্সিং পেশায় যোগদানের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া, গ্র্যাজুয়েট নার্স হয়ে একজন শিক্ষার্থী জেনারেল বিসিএস দিয়ে একজন ১ম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হতে পারবে। এছাড়া, দেশের সাধারণ ক্যাটাগড়িতে যেকোন চাকরি করতে পারবে।

 

দেশ-বিদেশে উচ্চশিক্ষা

নার্সিং পেশার জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলছে। একটা সময় দেশে নার্সিং পেশার তেমন সুযোগ সবিধা না থাকলেও বর্তমানে উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে।

এছাড়া, দেশে উচ্চ শিক্ষার পাশাপাশি বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য নার্সদের অনেক সুযোগ রয়েছে। সাধারণত এমএসসি, পিএইচডি ও অন্যান্য উচ্চতর ডিগ্রি নিতে অনেক নার্স বিদেশে যাচ্ছে। বিদেশে পড়াশোনার জন্য অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিনামূলে স্কলারশীপ দিয়ে থাকে। আপনি ফ্রিতে এসব প্রতিষ্ঠানে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে পারবেন। বর্তমানে অধিকাংশ শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্য, কানাডা, থাইল্যান্ড, কোরিয়া ও চীনে যাচ্ছে।

 

একজন নার্সের মাসিক আয়

দেশের কোন সরকারী হাসপাতালে কোন ব্যক্তি নার্স হিসেবে জীবন শুরু করলে প্রথমে অ্যাসিস্ট্যান্ট নার্স অথবা ওটি সিস্টার হিসাবে যোগদান করবেন। সরকারি বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী- সম্ভাব্য গড় বেতন ৮,০০০ টাকা —- ১৬,৫৪০ টাকা মাসিক বেতন পাবেন। এছাড়া, অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও পাবেন।

তবে, বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে যোগদান করলে সাধারণত ১৪,০০০ টাকা থেকে বেতন শুরু হয়। তবে, হাসপাতাল-ক্লিনিকভেদে তা ভিন্ন হতে পারে।

 

নতুনদের জন্য পরামর্শ

নাসিং একটি মহৎ পেশা। দেশে এ পেশায় ভালো ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ রয়েছে। দেশে উচ্চ শিক্ষার পাশাপাশি বিদেশে উচ্চ শিক্ষার নেওয়ার সুযোগসহ বিদেশে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। দিন দিন হাসপাতালের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে নার্সিং পেশায় প্রচুর কর্মক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। তাই আপনি চাইলে এ পেশায় নিজের ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।

 

লেখক:

নাছিমা আক্তার মুক্তা।
শিক্ষক
কলেজ অব নার্সিং মহাখালী।

 

######

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button