‘গুলি করার আগে পুলিশকে হিন্দিতে কথা বলতে শুনেছি’
চানখাঁরপুলে শহীদ হওয়া ইয়াকুবের চাচার সাক্ষ্য
স্টাফ রিপোর্টার
জুলাই অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত মুহূর্তে ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখাঁরপুলে পুলিশের গুলিতে নিহত ইয়াকুবের চাচা ও প্রত্যক্ষদর্শী শহীদ আহমেদ ট্রাইব্যুনালে বলেছেন, ঘটনার দিন চানখাঁরপুলে পুলিশ সদস্যদের পরস্পর হিন্দিতে কথা বলতে শুনেছি। গতকাল বুধবার চানখাঁরপুল মামলায় তৃতীয় দিনের সাক্ষ্য গ্রহণে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ তিনি এ কথা বলেন।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের এই ট্রাইব্যুনালে গতকাল চানখাঁরপুলের দুটি ঘটনায় মোট তিনজন সাক্ষ্য দেন ।
শহীদ আহমেদ বলেন, ভাতিজা ইয়াকুব ও ছেলে সালমানকে নিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে ৫ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টায় চানখাঁরপুল এলাকায় জড়ো হই। তখন সেখানে রাস্তার বিপরীতে জড়ো হওয়া কিছু পুলিশ সদস্যকে নিজেদের মাঝে হিন্দিতে কথা বলতে শুনি।
তিনি বলেন, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে চানখাঁরপুল হতে শাহবাগ হয়ে গণভবনে যাওয়ার পরিকল্পনা করে সামনে আগাচ্ছিলাম। এ সময় পুলিশ গুলি করা শুরু করে। এতে আমার পাশেই একজন পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে খবর আসে আমার ভাতিজা ইয়াকুবও গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তাকে আমরা মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।
শহীদ ইয়াকুবের চাচা বলেন, পরে জেনেছেন শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ডিএমপির মো. ইমরুল, ইন্সপেক্টর আরশাদের উপস্থিতিতে কনস্টেবল সুজন, নাসিরুল, ইমাজ গুলি করেছিলেন।
ট্রাইব্যুনালে শহীদ ইয়াকুবের মা রহিমা আক্তার বলেন, আমার ৩৫ বছরের ছেলে মো. ইয়াকুব নিউমার্কেটে ডেলিভারিম্যানের কাজ করত। ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই গোপনে আমাকে না জানিয়ে সে মিছিলে যেত। গত বছরের ৫ আগস্টও চানখাঁরপুল এলাকার আন্দোলনে গিয়েছিল। ওইদিন সকালে সে সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়। পেটের এক পাশ দিয়ে গুলি ঢুকে অপর পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়।
তিনি বলেন, প্রথমে আমাকে আত্মীয়-স্বজন কেউ কিছু বলছিলেন না। সবাই সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। আমি সবাইকে বললাম, তোমরা কাঁদছ কেন? আমাকে কাঁদতে দাও না কেন? এক পর্যায়ে আমার ছেলের লাশ যখন খাটিয়ায় করে আনা হয়, তখন আমি সব বুঝে যাই ।
সাক্ষ্য গ্রহণের এক পর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের টিভি মনিটরে মো. ইয়াকুবের রক্তাক্ত ভিডিও দেখানো হলে হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। অশ্রুসিক্ত রহিমা সে সময় বলতে থাকেন, ‘আমি একটা মা, জিন্দা লাশ হয়ে বেঁচে আছি। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। হাসিনা, কাউয়া কাদেরসহ যারা গুলির অর্ডার দিয়েছে, আমি তাদের বিচার চাই।’
ট্রাইব্যুনালে চানখাঁরপুল ঘটনায় শহীদ ইসমামুল হকের বড় ভাই মহিবুল হক জানান, তার ভাই চকবাজারে একটি দোকানে কাজ করত। ৫ আগস্ট সে চানখাঁরপুলে পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়। ঘটনার দিন দুপুর ১টায় অপরিচিত একজন তাকে জানান, তার ভাই গুলিবিদ্ধ হয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
তিনি বলেন, খবর পেয়েও আমরা সেদিন কারফিউর কারণে যানবাহন না পেয়ে ঢাকা আসতে পারিনি। পরদিন ৬ আগস্ট ইসমামুলের অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানে তার গুলির স্থানে অপারেশন করা হয়। তারপর তার অবস্থার অবনতি ঘটলে রাতে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। পরদিন ৭ আগস্ট তাকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত সেদিন বিকাল ৪টায় ইসমামুল মারা যায়।
আদালতে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। এ সময় চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামসহ অপর প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন।
/আইএস