এসডিজি কি? এসডিজি এর লক্ষ্যসমূহ । SDG এর লক্ষ্যমাত্রা কয়টি?

টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট, লক্ষ্যমাত্রা ও সূচকসমূহ

এসডিজি ও এর লক্ষ্য সমূহ

এসডিজি হচ্ছে Sustainable Development Goals এর সংক্ষিপ্ত রূপ। বাংলা অর্থ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা। জাতিসংঘ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এমডিজি ২০১৫ পরবর্তী বৈশ্বিক উন্নয়ন লক্ষ্য ধরে রাখার ভাবনা থেকেই এসডিজি ধারণার জন্য। জাতিসংঘের উদ্যোগে ২৫ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সংস্থার সদর দফতরে তিন দিনের বিশ্ব সম্মেলনে পরিবর্তনশীল বিশ্বের সমতা ও বৈষম্যহীন উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ‘রূপান্তরিত আমাদের পৃথিবী : ২০৩০ সালের জন্য টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)’ শিরোনামে এই লক্ষ্যমাত্রাসমূহ আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়েছে। ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে এর কার্যক্রম শুরু হয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানরা উক্ত সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন।

এসডিজি ১৫ বছর মেয়াদী একটি বহুমুখী পরিকল্পনা। প্রারম্ভিক তিন বছরে এর অগ্রগতি মূল্যায়ন করা খুব একটা সমীচীন হবে না। কেননা, প্রথম তিন বছর এর প্রস্তুতি পর্বের মধ্যেই পড়ে। তবে এমডিজি অর্জনের ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন সূচকে প্রথম তিন বছরের অর্জন উৎসাহব্যঞ্জক অগ্রগতির মধ্যেই পড়ে। এক্ষেত্রে মূল চ্যালেঞ্জ হবে অগ্রগতির এ ধারাকে ধরে রেখে ২০৩০ সালের মধ্যে সকল সচকে সাফল্য অর্জন করা। বিশেষজ্ঞরা এসডিজির লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়ন করাকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখলেও এগুলো বাস্তবায়ন যে অসম্ভব তা বলছেন না। সরকার দৃঢ় ও কঠিন সংকল্পবদ্ধ হলে এমডিজির মতো এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও সাফল্য দেখাতে পারবে বলে সকলেই বিশ্বাস করেন।

 

 

এসডিজি’র লক্ষ্যসমূহ:

জাতিসংঘ সারা বিশ্বের উন্নয়ন টেকসই করতে ১৭টি লক্ষ্য (এসডিজি) নির্ধারণ করেছে। প্রতিটির ক্ষেত্রে রয়েছে আবার একাধিক সুনির্দিষ্ট টার্গেট। ১৭টি লক্ষ্যে অধানে রয়েছে ১৬৯টি টার্গেট। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলো (এসডিজি) হচ্ছে-

১) সব দেশ থেকে সব ধরনের দারিদ্র্য দূরীকরণ।

২) খাদ্য নিরাপত্তা ও টেকসই কৃষি উন্নয়ন নিশ্চিত করে ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী গড়ে তোলা।

৩) স্বাস্থ্যকর জীবন নিশ্চিত করা এবং সব বয়সী মানুষের জন্য সমৃদ্ধ জীবনের প্রণোদনা প্রদান।

৪) সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে ন্যায্য ও মানসম্মত শিক্ষা এবং সবার জন্য আজীবন শেখার সুযোগ সৃষ্টি

৫) লিঙ্গসমতা অর্জন এবং কন্যাশিশু ও নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা। ৬. সবার জন্য পানি ও স্যানিটেশন সহজলভ্য করা এবং এর টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। ৭. সবার জন্য সহজলভ্য, নির্ভরযোগ্য, টেকসই ও আধুনিক শক্তিপ্রাপ্তি (বিদ্যুৎ/জ্বালানি) নিশ্চিত করা।

৮) সবার জন্য মানসম্মত কাজ ও উৎপাদনমুখী কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার মাধ্যমে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নকে উৎসাহ প্রদান। ৯. সহজ অবকাঠামোর মাধ্যমে বৃহৎ, টেকসই শিল্পায়ন ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তিকে উৎসাহ প্রদান।

১০) বিভিন্ন দেশের মধ্যে এবং দেশের অভ্যন্তরে বৈষম্য কমিয়ে আনা।

১১) শহর ও মানুষের বসবাসকে একীভূত, নিরাপদ, প্রাণবন্ত এবং টেকসই করা।

১২) সম্পদের উৎপাদন এবং সেবন/ব্যবহারকে টেকসই করা।

১৩) জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তন ও এর প্রভাব রোধে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ।

১৪) সাগর, মহাসাগর ও সমুদ্রসম্পদের টেকসই উন্নয়ন এবং ব্যবহার নিশ্চিত করা।

১৫) প্রকৃতি ব্যবস্থাপনার টেকসই ব্যবহারকে উৎসাহ ও সুরক্ষা প্রদান, বনসম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা ও মরুময়তা প্রতিরোধ, বনজসম্পদের সুরক্ষা ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি বন্ধ করা।

১৬) টেকসই উন্নয়নে সমাজের সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে শাস্তি প্রতিষ্ঠা, সবার জন্য ন্যায়বিচার প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, সবক্ষেত্রে কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা।

১৭) এসডিজির বাস্তবায়নে এবং টেকসই উন্নয়নে বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব সৃষ্টি করা।

অতএব বলা যায়, এসডিজিতে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত উন্নয়ন এই ৩টি প্রধান বৈশিষ্ট্যকে সমন্বয় করা হয়েছে। এসডিজি হচ্ছে মানুষ ও পৃথিবীর সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার একটি বৃহৎ কর্মপরিকল্পনা, যা ব্যক্তি স্বাধীনতা নিশ্চিত করাসহ বৈশ্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত পৃথিবী গড়ে তোলার পাশাপাশি সব নাগরিকের সম্ভাবনা, মর্যাদা ও সমতা নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ জাতিসংঘ। সম্পদের টেকসই উৎপাদন ও ব্যবহার, প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা, জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তন রোধে ত্বরিৎ উদ্যোগ এবং বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজনের জন্য পৃথিবীকে সব ধরনের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করাই এসডিজির লক্ষ্য।

 

এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের অগ্রগতি

জাতিসংঘের উদ্যোগে ২৫ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ অনুষ্ঠিত তিন দিনের বিশ্ব সম্মেলনে এমডিজি পরবর্তী পরিবর্তনশীল বিশ্বের সমতা ও বৈষম্যহীন উন্নয়ন নিশ্চিত করতে “রূপান্তরিত আমাদের পৃথিবী : ২০৩০ সালের জন্য টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা” শিরোনামে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয় বিশ্বের আগাসমী ১৫ বছরের উন্নয়নের রূপরেখা এসডিজি (Sustainable Development Goals)। “কাউকে বাদ দিয়ে নয়, কাউকে পেছনে ফেলে নয়” এই বক্তব্যকে মূল প্রতিপাদ্য হিসেবে ধারণ করে জাতিসংঘ বিশ্বব্যাপী টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এসডিজির ১৭টি অভীষ্ট নির্ধারণ করে। প্রতিটি অভীষ্টের জন্য আবার নির্ধারণ করা হয়েছে একাধিক সুনির্দিষ্ট টার্গেট যার মোট সংখ্যা ১৬৯টি, সঙ্গে আছে আরও ২৩২টি সূচক। এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হলেও এসডিজি বাস্তবায়ন অতটা সহজ হবে না বলেই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সরকার আশা পোষণ করছেন এমডিজির সফল বাস্তবায়নের অনুপ্রেরণায় এসডিজি বাস্তবায়নেও বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশ হবে বাংলাদেশ।

 

এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি : জাতিসংঘ এসডিজি বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারণ করেছে ২০১৫-২০৩০ সাল (১৫ বছর) পর্যন্ত সময়কে। সে হিসেবে ইতোমধ্যে এসডিজি বাস্ত বায়নের নির্ধারিত সময়ের তিন বছর অতিবাহিত হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার এসডিজি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি হিসেবে জাতীয় পরিকল্পনার সমন্বয়, মন্ত্রণালয় বিভাগ ভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা, দায়িত্ব বণ্টন, তথ্য বিপ্লবের জন্য তথ্য গ্যাপ বিশ্লেষণ, এসডিজির অর্থায়ন কৌশল, উৎস ও চাহিদা মূল্যায়ন, পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন কাঠামো তৈরি এবং পাঁচ বছর ব্যাপী এসডিজির কৌশলগত বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয় ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নকে বিবেচনায় নিয়েই সরকার প্রণয়ন করেছে সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (২০১৬-২০)। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের হাত ধরেই সরকার এসডিজির অধিকাংশ অভীষ্ট অর্জন করতে চায়। আর এই লক্ষ্যেই সরকার গত তিন বছর ধরে নানান প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলছে। বাস্তবায়ন কার্যক্রমের আলোকে সরকার গত বছর জাতিসংঘে একটি আংশিক প্রতিবেদন পেশ করে এবং এ বছর একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পেশ করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন সূচকের অগ্রগতির আলোকে প্রথম তিন বছরে এসডিজি বাস্তবায়নের অগ্রগতির একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র নিম্নে তুলে ধরা হলো:

 

প্রথম অভীষ্ট : এসডিজির প্রথম অভীষ্ট দারিদ্র্য নিরসন। এ অভীষ্টের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ২০১০ সালে দেশে জাতীয় পর্যায়ে দারিদ্র্যের হার ছিল ৩১.৫ শতাংশ এবং চরম দারিদ্র্যের হার ১৭.৬ শতাংশ সেখানে ২০১৬ সালে তা এসে দাঁড়ায় যথাক্রমে ২৪.৩ শতাংশ এবং ১২.৯ শতাংশে। ২০১৮ সালে এ হার আরো কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২১.৮ শতাংশ এবং ১১.৩ শতাংশে, যা অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সন্তোষজনক অগ্রগতির নির্দেশক।

 

দ্বিতীয় অভীষ্ট : খাদ্য নিরাপত্তা ও টেকসই কৃষি উন্নয়ন নিশ্চিত করে ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী গড়ে তোলা । এ অভীষ্টের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, পুষ্টি সূচকের ক্ষেত্রে শিশুদের খর্বিত বিকাশ ২০১৬ সালে যেখানে ছিল ৩৮.৫৯ শতাংশ। ২০১৭ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৭.৮২ শতাংশে। কৃষিখাতে উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা উভয়ই বৃদ্ধি পেয়েছে। চাল উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ পরিচিতি পেতে যাচ্ছে বিশ্ব রোল মডেল হিসেবে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে মোট চালের উৎপাদন ছিল ৩৪.৭০ মিলিয়ন টন যা বেড়ে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ৩৬.২৮ মিলিয়ন টনে। হেক্টর প্রতি গড় ফলন ২০০৫-০৬ অর্থ বছরের ৩.১ টন থেকে বেড়ে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ৪.২ টনে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আবাদযোগ্য কৃষিজমির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ৫৮.১৯ শতাংশ যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল ৫৮.১৩ শতাংশ। সরকারের কৃষিবান্ধব নীতি গ্রহণ এবং তা বাস্তু বায়নের ফলেই এ সাফল্য অর্জিত হয়েছে।

 

তৃতীয় অভীষ্ট : সুস্বাস্থ্য ও সমৃদ্ধ জীবনের প্রণোদনা। এ অভীষ্টের ক্ষেত্রে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর হার ২০১৬ সালে প্রতি হাজার জীবিত জন্মে ছিল ৩৫ জন, ২০১৭ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩১ জনে এবং নবজাতক মৃত্যুর হার ২০১৬ সালে প্রতি হাজারে ছিল ১৯ জন যা কমে ২০১৭ সালে দাঁড়ায় ১৭ জনে। আর মাতৃমৃত্যুর হার ২০১৬ সালে প্রতি হাজারে ছিল ১৭৮ জন, ২০১৭ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৭২ জনে।

 

চতুর্থ অভীষ্ট : ন্যায্য ও মানসম্মত শিক্ষা। এ অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য সরকার উপবৃত্তি প্রকল্প, তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি, রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন প্রকল্প, স্কুল ফিডিং কর্মসূচি এবং মৌলিক স্বাক্ষরতা প্রকল্পসহ আরও কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব কর্মসূচির ফলে বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী ভর্তির হার ক্রমাগত বাড়ছে। ২০১৬ সালে যেখানে বিদ্যালয়ে নিট ভর্তির হার ছিল ৯৭.৯%, ২০১৭ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৭.৯৭% এ। অন্যদিকে ২০১৬ সালে প্রাথমিক শিক্ষায় ঝড়ে পড়ার হার ছিল ১৯.২%, ২০১৭ সালে তা কমে হয়েছে ১৮.৮%। আর কারিগরি শিক্ষায় অংশগ্রহণের হার ২০১৫ সালের ১৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১৭ সালে ১৭ শতাংশে দাড়িয়েছে। যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে বিদেশে প্রেরিত কর্মীদের দক্ষতায়।

 

পঞ্চম অভীষ্ট : লিঙ্গ সমতা অর্জন ও নারীর ক্ষমতায়ন। নারীর ক্ষমতায়নে বর্তমানে বাংলাদেশের বৈশ্বিক ব্যাংকিং ৪৭তম। সামগ্রিক বৈশ্বিক জেন্ডার গ্যাপসূচকে বাংলাদেশ মোট জেন্ডার পার্থকাকে ৭২ শতাংশে নামিয়ে এনে ২০১৭ সালে দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশের মধ্যে শীর্ষ স্থানে উঠে এসেছে।

 

ষষ্ঠ অভীষ্ট নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন সহজলভ্য করা ও এর টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। এই অভীষ্টের ক্ষেত্রে ২০১৭ সালের হিসাবে দেখা যায় বর্তমানে দেশে মোট জনসংখ্যার ৯৮ শতাংশ নিরাপদ খাবার পানি এবং ৭৬ শতাংশ নিরাপদ স্যানিটেশনের সুবিধা পাচ্ছে।

 

সপ্তম অভীষ্ট : সহজলভ্য, নির্ভরযোগ্য টেকসই ও দূষণমুক্ত জ্বালানী। এই অভীষ্টের ক্ষেত্রে ২০১৭ সালের হিসাব অনুযায়ী দেশের মোট জনসংখ্যার ৮৫.৩ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পেত। বর্তমানে এ হার দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯০ শতাংশে।

 

অষ্টম অভীষ্ট : মানসম্মত কাজ ও উৎপাদনমুখী কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার মাধ্যম টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন। এ অভীষ্টের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য উৎসাহব্যঞ্জক। ২০১৪-১৫ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশের গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ শতাংশের বেশি। গত বছর প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.৮৬ শতাংশ। এ সময়ে মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে ধারাবাহিকভাবে। বেকারত্বের হার ২০১০ সালের ৪.৬ শতাংশ থেকে ২০১৭ সালে ৪.২ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০০৫-০৬ সালে যেখানে ৪৭.৩ মিলিয়ন, ২০১৬-১৭ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০.৮ মিলিয়নে। ২০১৫ অর্থবছরে প্রবাসে গমনকারী কর্মীর সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৬১ হাজার, গত দুই বছরে তা বেড়ে ১৫ লাখ ৯০ হাজারে উন্নীত হয়েছে। রেমিট্যান্স প্রবাহও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। রেমিট্যান্স প্রাপ্তির দিক থেকে বর্তমানে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৯ম।

 

নবম অভীষ্ট : সহজ অবকাঠামোর মাধ্যমে বৃহৎ টেকসই শিল্পায়ন ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তিকে উৎসাহ প্রদান। এই অভীষ্টের ক্ষেত্রে অর্থনীতিতে শিল্প বিশেষ করে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের অবদান ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জিডিপিতে এ খাতের অবদান ছিল ১৮.৯৯ শতাংশ। মোবাইল নেটওয়ার্কে আওতাভুক্ত জনসংখ্যার হার থ্রি জি এর ক্ষেত্রে ২০১৭ সালেই প্রায় ৯২.৫৫ শতাংশে পৌঁছেছে। যা ছিল ২০২০ সালের লক্ষ্যমাত্রা। ফোর জি প্রযুক্তিও এখন অনেকের হাতে পৌঁছে গেছে এবং ফাইভ জি প্রযুক্তিতেও দ্রুত প্রবেশের প্রচেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ দুইটি সাবমেরিন ক্যাবল ফোরামে সংযুক্তি লাভ করেছে এবং তৃতীয়টিতে সংযুক্ত হওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। দেশে ২৮টি হাইটেক পার্ক স্থাপিত হয়েছে যেখানে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য তৈরি হচ্ছে ও বিদেশে সেবা রপ্তানি হচ্ছে।

 

দশম অভীষ্ট : অসমতা বা বৈষম্য হ্রাস। এই লক্ষ্য অর্জনে দেশে প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু রয়েছে। যার সাফল্য চোখে পড়ার মতো। প্রতিবেশি দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে বৈষম্যের হারও অনেক কমে এসেছে। সম্প্রতি World Economic Forum বিশ্বের ৭৪টি সম্ভাবনাময় অর্থনীতির উপর অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন বিষয়ে সমীক্ষা করে যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৪তম।

একাদশ অভীষ্ট : নগর ও জনপদে মানুষের বসবাসকে একীভূত, নিরাপদ, প্রাণবন্ত ও টেকসই করা। দেশের বড় শহরগুলোই বিশেষ করে ঢাকা ও চট্টগ্রামের জন্য পরিবহন, রাস্তাঘাট উন্নয়ন, পয়োনিষ্কাশন, ভূ-উপরিস্থিত পানি সরবরাহ ইত্যাদি নানা খাতে অনেকগুলো বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। তাছাড়া বর্তমান সরকার রূপকল্প ২০৪১ এ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে ২০৪১ সালের মধ্যে প্রতিটি গ্রামকে শহরে পরিণত করা হবে কিংবা শহরে প্রচলিত সেবাসমূহ গ্রামে পৌঁছে দিবে।

 

দ্বাদশ অভীষ্ট : সম্পদের উৎপাদন ও ব্যবহারকে টেকসই করা।

 

ত্রয়োদশ অভীষ্ট : জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব মোকাবিলায় পদক্ষেপ গ্রহণ।

 

চতুৰ্দশ অভীষ্ট সমুদ্র সম্পদের টেকসই উন্নয়ন ও ব্যবহার।

 

পঞ্চমদশ অভীষ্ট : প্রাকৃতিক ব্যবস্থাপনার টেকসই ব্যবহারকে উৎসাহ ও সুরক্ষা প্রদান, বনজসম্পদের সুরক্ষা ও টেকসই ব্যবস্থাপনা, মরুময়তা প্রতিরোধ ও জৈব বৈচিত্র্যের ক্ষতি বন্ধ করা। এসডিজির এই চারটি লক্ষ্যই পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি হ্রাসকরণের সাথে সম্পর্কিত । সরকার সকল প্রকল্প ও কার্যক্রমে পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় পরিবেশ সুরক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় সরকার গ্রহণ করেছে ১০০ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০।

 

ষোড়শ অভীষ্ট : শান্তি, ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে সরকার সর্বদাই তৎপরতা চালাচ্ছে। সকল প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি গুড গভর্ন্যাপ, ই গভর্ন্যান্সের মতো ব্যবস্থাসমূহ প্রবর্তনের জোর প্রচেষ্টা গ্রহণ করছে। আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষার্থে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে তাদের নিরাপত্তা, বসবাস ও খাদ্যের যোগান দিয়ে যাচ্ছে।

 

সপ্তদশ অভীষ্ট : বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব। এসডিজির মতো একটি সমন্বিত ও বহুমুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিষয়টির গুরুত্ব দিয়ে সরকার বহির্বিশ্বের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে।

 

##

এসডিজি,এসডিজি, এসডিজির ১৭ টি লক্ষ্য কি কি, এসডিজি এর পূর্ণরূপ কি,এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ,এসডিজি ও বাংলাদেশ, এসডিজি কাকে বলে, এসডিজি বাংলাদেশ, এসডিজি কি এবং কেন
এসডিজি ১৭ লক্ষ্যসমূহ, এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশের অগ্রগতি, এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশ, এসডিজি অর্থ কি, এসডিজি অভীষ্ট, এসডিজি অনুচ্ছেদ, এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি, এসডিজি ও বাংলাদেশের অগ্রগতি,এসডিজি এর মূল উদ্দেশ্য কি, এসডিজি এর লক্ষ্যসমূহ কি কি, এসডিজি এর লক্ষ্যমাত্রা কয়টি, এসডিজি এর লক্ষ্যসমূহ, এসডিজি এর মেয়াদকাল কত, এসডিজি এর সূচক কয়টি, এসডিজি এর লক্ষ্য কয়টি, এসডিজি এবং বাংলাদেশ, এসডিজি এর গোল কয়টি, এসডিজি ও বাংলাদেশের অগ্রগতি ২০২২, এসডিজি সূচক কতটি,এসডিজি সূচক কয়টি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button