ইশরাক নামাজ বা সালাতুল ইশরাক কি, ইশরাক নামাজের ফজিলত

ইশরাক নামাজ বা সালাতুল ইশরাক

ইশরাক নামাজ

আপনি কি জানেন  সালাতুল ইশরাক কি? ইশরাক নামাজ এর ফজিলত, ইশরাক নামাজ কত রাকাত, ইশরাক নামাজ কোন সময় পড়তে হয় এবং ইশরাক নামাজ আদায়ের নিয়ম গুলি যদি না জানেন তবে এখনি পড়ুন। কেননা, ইশরাকের নামাজ বা সালাতুল ইশরাক একটি নফল নামাজ যা বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে পড়তেন এবং অন্যকেও পড়তে বলতেন।

ইশরাক নামাজ এর চমৎকার ফজিলতও বর্ণনা করেছেন তিনি। কী সেই ফজিলত? এবং কোন সময়, কত রাকাত, কী নিয়ম মেনে পড়তে হবে এই নামাজ?

ইশরাক নামাজ
ইশরাক নামাজ

ইশরাকের নামাজ কি বা ইশরাক নামাজ কাকে বলে?

ইশরাক শব্দের অর্থ হলো আলোকিত হওয়া। সূর্য উঠার পর জগত আলোকিত হয় বলে এ সময় হাদিসে যে নামাজের ইঙ্গিত পাওয়া যায়, মুহাদ্দিসিনে কেরামগণ তাকে সালাতুল ইশরাক বলেছেন।

প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে এ নামাজ পড়তেন না বরং একটু সময় নিয়ে আদায় করতেন।

ইশরাক নামাজ বা সালাতুল ইশরাক নামাজের ফজিলত

ইশরাক নামাজ বা সালাতুল ইশরাক একটি  নফল নামাজ। ইশরাক নামাজের ফজিলত বর্ণনায় একাধিক হাদিসে এসেছে-

> রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে ফজরের নামাজ পড়ল। অতঃপর সূর্য উঠা পর্যন্ত সেখানে বসে আল্লাহর জিকির করল; অতঃপর দাঁড়িয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়ল; সে একটি হজ ও ওমরাহ করার সাওয়াব নিয়ে ফিরে গেল।’ (তাবারানি, আত-তারগিব)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘সূর্য উঠার আগে আল্লাহর জিকির, তাকবির, তাহমিদ ও তাহলিল পাঠ করা আমার কাছে ইসমাঈল বংশের দুইজন গোলাম আজাদ করার চেয়েও অধিক প্রিয়।’ (মুসনাদে আহামদ)

> হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সাথে আদায় করার পর সূর্যোদয়ের আগ পর্যন্ত ওখানে বসে থেকেই মহান আল্লাহর জিকির করে। অতঃপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করে। তার জন্য পূর্ণাঙ্গ হজ ও ওমরার সমান সাওয়াব রয়েছে।’ (তিরমিজি, মিশকাত)

সালাতুল ইশরাক নামাজ পড়ার সময়

ফজর নামাজ পড়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সূর্য উঠার পর এ নামাজ আদায় করতে হয়। কেউ কেউ বলেছেন সূর্য উঠার ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর; আবার কেউ কেউ বলেছেন ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর এ নামাজ পড়তে হয়। আর সূর্য এক বর্শা পরিমাণ (দেড় মিটারের মতো) মধ্যাকাশের দিকে উঠা পর্যন্ত এ নামাজের ওয়াক্ত থাকে।

আরো পড়ুন- রোজা ভঙ্গের কারণ কি কি? রোজা মাকরুহ হবার কারণ গুলো

আরো পড়ুন- নামাজে মনোযোগী হওয়ার উপায়

আরো পড়ুন- ওযু কাকে বলে? ওযুর ফরজ কয়টি ও কি কি?

ইশরাক নামাজ পড়ার নিয়ম

ইশরাক নফল নামাজ। এটি অন্যান্য নামাজের মতোই দুই রাকাত করে আদায় করতে হয়। ইশরাকের নামাজের জন্য সুস্পষ্ট আলাদা কোনো নিয়ম ও নিয়ত নেই। শুধু ‘আল্লাহু আকবার’ বলে শুরু করা। এবং দুই রাকাত দুই রাকাত করে মোট ৪ রাকাত নামাজ পড়া।

ইশরাকের নামাজের সুনির্দিষ্ট রাকাত সংখ্যার উল্লেখ না থাকলেও কেউ কেউ দুই রাকাত থেকে শুরু করে আট রাকাত পর্যন্ত পড়ে থাকে। আবার কিছু সংখ্যক ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, ইশরাকের নামাজ দুই রাকাত করে ১২ রাকাআত পর্যন্ত পড়া যায়।

তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই দুই রাকাত করে ৪ রাকাত পড়তেন। এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমল দ্বারা প্রমাণিত।

ইশরাক নামাজের ফজিলত ও গুরুত্বঃ

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, ফজরের নামাজের পর সূর্য উঠার ১৫ থেকে ২৫ মিনিট পর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে দুই দুই রাকাত করে ৪ রাকাত নামাজ আদায় করা। প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) এর অনুসরণ এবং ঘোষিত ফজিলত আদায় করতে এ নফল নামাজের আমল অব্যাহত রাখা।

ইয়া আল্লাহ! মুসলিম উম্মাহকে নিয়মিত ইশরাকের নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। এবং ইশরাকের নামাজের মাধ্যমে হজ ও ওমরার সাওয়াব লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button